কুষ্টিয়া পৌরসভার ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের বাজেট অনুমোদন হয়েছে। গত ২৭ জুন কুষ্টিয়া পৌরসভার ম. আ. রহিম মিলনায়তনে পৌর পরিষদের মাসিক সভায় এ বাজেট অনুমোদন হয়। নতুন কোন করারোপ ছাড়াই ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের ১৬০ কোটি ২৯ লাখ ২৪ হাজার ৬ শত ৯৯ টাকার বাজেট অনুমোদন দেয় পৌর পরিষদ।
কুষ্টিয়া পৌরসভার বারংবার নির্বাচিত মেয়র জননেতা আনোয়ার আলী চেয়ারম্যান ও মেয়র হিসেবে ২৫ বারের মতো জনকল্যাণমুখি এ বাজেট ঘোষণা করেন। বাজেট বক্তৃতায় মেয়র আনোয়ার আলী বলেন, পৌরবাসীর সাধ আর পৌরসভার সাধ্যের সমন্বয় করার মধ্য দিয়ে আরও একটি বছর অতিক্রম করলো কুষ্টিয়া পৌরসভা। এটি বর্তমান পৌর-পরিষদের তৃতীয় বাজেট। প্রথমেই আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি আমার পৌর-পরিষদের সম্মানিত সদস্যবৃন্দকে এবং পৌরবাসীকে যারা আমাদেরকে তাদের মূল্যবান এই দায়িত্ব পালনের জন্য নির্বাচিত করেছেন।
একই সাথে আমি পৌরসভার সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি, পৌর-পরিষদ তথা পৌরবাসীর স্বপ্ন পূরনের লক্ষ্যে তাদের নিরলস পরিশ্রমের জন্য। ১৮৬৯ সালের ০১ এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত কুষ্টিয়া পৌরসভা উন্নয়নের বিচারে আজ দেশের মধ্যে একটি মডেল পৌরসভা। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে এই অর্জনকে টেকশই করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।
মেয়র বলেন, নাগরিক সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে কুষ্টিয়া পৌরসভার দৃষ্টিভঙ্গি অনেক উন্নত হলেও সেটি নিয়ে কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। আপনারা জানেন ৪২.৭৯ বর্গ কিমিঃ আয়তন বিশিষ্ট বিশাল আকৃতির এই পৌরসভার সামগ্রিক উন্নয়ন পৌরসভার নিজস্ব আয় দিয়ে নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এছাড়া, সম্প্রসারিত নতুন ৯টি ওয়ার্ডে উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড শুরু করলেও প্রয়োজনে তুলনায় তা যথেষ্ট নয়। সমগ্র পৌরসভার ভৌত-অবকাঠামোর চাহিদা পূরণের এই কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদেরকে সহযোগীতা করে যাচ্ছে তৃতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নতিকরন (সেক্টর) প্রকল্প, জাতীয় নগর দারিদ্র হ্রাসকরণ কর্মসূচী, আরবান প্রাইমারী হেল্থ কেয়ার ও সার্ভিসেস ডেলিভারী প্রকল্প, ৩৭ জেলা শহর পানি সরবরাহ প্রকল্প, বিএমডিএফ, মানব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প এবং সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প।
এছাড়াও অতি সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে ওয়েষ্ট টু এনার্জি প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রকল্প সহায়তা ছাড়াও নিজস্ব অর্থায়নে পৌরবাসীর দৈনন্দিন ছোট ছোট সমস্যার সমাধান আমরা করে চলেছি। এছাড়া আমাদের দীর্ঘ মেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় সহায়ক আর্থ-সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আধুনিক মানের ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ, ম.আ.রহিম সুপার মার্কেট নির্মাণ, আধুনিক সুযোগ-সুবিধাযুক্ত কসাইখানা নির্মাণ, গড়াই নদীর তীরে আধুনিক বিনোদন পার্ক নির্মাণ, কর্মজীবি মহিলা হোস্টেল ও তাদের বাচ্চাদের জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার নির্মাণ, বৃদ্ধাশ্রম নির্মাণ, ই-সেবা নিশ্চিতকরনের মাধ্যমে ডিজিটাল পৌরসভা গঠন বিভাগীয় পর্যায়ে বিদ্যুৎ খাতে অপচয়রোধ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারে অবদান রাখায় মেয়র ক্যাটাগরিতে কুষ্টিয়া পৌরসভা ১ম পুরস্কার অর্জন এবং পরিবেশ-বান্ধব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি নিশ্চিতকরণ, যার পুরস্কার ইতোমধ্যে আমরা পাওয়া শুরু করেছি পরিবেশ অধিদপ্তর, খুলনা কর্তৃক পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ অবদান রাখার জন্য শুভেচ্ছা স্মারক গ্রহণের মাধ্যমে।
এছাড়া কৃষি-শিল্পের বিকাশে কুষ্টিয়াতে আধুনিক ও প্রযুক্তি নির্ভর একটি কৃষি কলেজ নির্মানের বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে। সর্বোপরি, কুষ্টিয়া পৌরসভার জন্য একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী মাষ্টার প্ল্যান প্রণয়নের কাজ চলছে যেখানে পৌরসভার সামগ্রিক উন্নয়ন পরিকল্পনা ও এটি বাস্তবায়নের কৌশল বিষদভাবে বর্ণনা করা থাকবে।
মেয়র আরও বলেন, বিসবায়নের এই যুগে সীমিত সম্পদের মাধ্যমে পৌরবাসীর ক্রমবর্ধমান নাগরিক সেবার চাহিদা পূরণ নিঃসন্দেহে একটি কঠিন কাজ। কিন্তু আমার বিশ্বাস পৌর-পরিষদের সম্মানিত সদস্যদের আন্তরিক প্রচেষ্টা ও সহযোগিতা, পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরলস পরিশ্রম এবং পৌরবাসীর সচেতন অংশগ্রহনের মাধ্যমে এই চাহিদা পূরনে সক্ষম হবো। আর এই বিশ্বাস বুকে নিয়ে পৌরবাসীকে আরও আধুনিক ও টেকশই সেবা প্রদানের লক্ষ্যে আমি কুষ্টিয়া পৌরসভার ২০১৮-১৯ অর্থ-বছরের জন্য ১৬০,২৯,১৪,৬৯৯.০০ (একশত ষাঁট কোটি উনত্রিশ লক্ষ চৌদ্দ হাজার ছয়শত নিরানব্বই) টাকার পূর্ণাঙ্গ বাজেট ঘোষনা করেছি। এবারের বাজেটে রাজস্ব খাতে ২৩ কোটি ৯৫ লাখ ৯ হাজার ৬ শত ৯৯ টাকা । উন্নয়নমুখী এ বাজেটে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়, রাস্তা, ড্রেন, অফিস ভবন, সড়ক বাতি, পানি ও অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩২ কোটি ৭৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকা এবং স্বাস্থ্য ও পয়ঃ প্রণালী খাতে ২ কোটি ৩৬ লাখ ৩২ হাজার টাকার উন্নয়ন কাজের বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
পৌর পরিষদের এ মাসিক সভায় উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ আলহাজ্ব মতিয়ার রহমান মজনু, প্যানেল মেয়র-২ সাইফ-উল-হক মুরাদ, প্যানেল মেয়র-৩ পারভীন হোসেন, কাউন্সিলর শাহানাজ সুলতানা (বনি), নুরজাহান, রীনা নাসরিন, মমতাজ জাহান, তাসলিমা খাতুন, সামসুন্নাহার (মায়া), রবিউল ইসলাম, খন্দকার মাজেদুল হক, বদরুল ইসলাম, খান এ করিম অকুল, নজরুল ইসলাম, পিয়ার আলী জোমারত, মহিউদ্দিন চৌধুরী মিলন, সাবাউদ্দিন সওদাগর, গোলাম মোস্তফা লাভলু, আনিচ কোরাইশী, রবিউল ইসলাম রবি, শাহিন উদ্দিন, মহিদুল ইসলাম, হেলাল উদ্দিন, ওলিউল্লাহ, শাহ জালাল, মীর রেজাউল ইসলাম বাবু, এজাজুল হাকিম, ইসলাম শেখ ও সচিব কামাল উদ্দিনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ।