Tuesday, March 21, 2023
প্রচ্ছদখুলনা বিভাগকুষ্টিয়াকুষ্টিয়া জেলা জুড়ে ফেনিসিডিল ও ইয়াবার বদলে নেশায় যুক্ত হয়েছে টাপেন্টা

কুষ্টিয়া জেলা জুড়ে ফেনিসিডিল ও ইয়াবার বদলে নেশায় যুক্ত হয়েছে টাপেন্টা

Published on

পুলিশের কঠোর নজদারি ও জোরদার অভিযানের মুখে নেশায় ব্যবহৃত মাদক ফেনসিডিল ও ইয়াবার আকাল চলছে। দামও আগের তুলনায় কয়েকগুন বেশি। এ অবস্থায় বিকল্প হিসেবে টাপেন্টা নামক এক প্রকার ব্যাথানাশক ও ঘুমের ট্যাবলেট নেশার জন্য ব্যবহার করছে মাদকসেবিরা। বিশেষ করে স্কুল ও কলেজের ছেলেরা ট্যাবলেট নিয়ে নেশা করছে।

বছর খানেক আগে জেলায় এ ট্যাবলেট নেশার জন্য মাদকসেবিরা ব্যবহার করছে বলে ধরা পড়ে। এরপর পুরো জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে জালের মত। প্রেসক্রিপশন ছাড়াই প্রায় প্রতিটি ফার্মেসিতে হাত বাড়ালেই মেলে এসব ট্যাবলেট। প্রশাসন ও ড্রাগ অফিস থেকে বারবার সতর্ক করা হলেও কোন কাজ হচ্ছে না। তিন থেকে চারগুন লাভ হওয়ায় ফার্মেসি মালিকরা কোন বাঁধা মানছে না।

জেলা ড্রাগ তত্বাবধায়কের কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, আগে হোরোইন, ফেনসিডিল, ইয়াবা ও গাঁজা সেবন করতো মাদকসেবিরা। এসব মাদক পাওয়া এখন বেশি কঠিন। তাই ঘুম ও ব্যাথার ট্যাবলেটকে নেশার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। বছর খানেক আগে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এরপর থেকে তা ব্যবহার করছেন অনেকেই। গ্রাম অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশ ক্যামিস্ট্র এন্ড ড্রাগিষ্ট্র সমিতি কুষ্টিয়া শাখার অফিস সুত্রে জানা গেছে, জেলার ৬টি উপজেলায় লাইসেন্সধারি ফার্মেসি আছে ২ হাজারের ওপরে। এ বাদেও অবৈধ অনেক ফার্মেসি রয়েছে। আর পৌর এলাকাতেই আছে কয়েক’শ ফার্মেসি। হাসপাতাল ও কলেজ মোড়ে অনেক ওষুধের দোকানে মাদক হিসেবে এসব ট্যাবলেট বিক্রি হচ্ছে। একটি ট্যাবলেটের সাধারন মূল্য ১৫ থেকে ২০ টাকা হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা।

অনুসন্ধান করে দেখা যায়, ব্যাথা ও ঘুমের এসব ট্যাবলেট ব্যবহার করে স্থানীয়ভাবে মাদক তৈরি করা হচ্ছে। এসব মাদক সস্তা ও সহজেই মিলছে। কলেজ ও স্কুলের ছাত্ররা এসব মাদক সহজেই কিনে সেবন করছে। টাপেন্টা ছাড়াও বিভিন্ন কোম্পানির ঘুম ও ব্যাথার ট্যাবলেট ও সিরাপ ব্যবহার হচ্ছে মাদক হিসেবে। এসব ট্যাবলেট ও সিরাপ মিশিয়ে ‘ ঝাটকা, ফুটুস ও ভুলাদানা’ নামে মাদক তৈরি হচ্ছে।

কুষ্টিয়ার একটি পার্কে সম্প্রতি কথা হয় পলিটেকনিক থেকে ডিপে¬ামা শেষ করা দুই শিক্ষার্থীর সাথে। দীর্ঘক্ষন সময় তারা পার্কের একটি বেঞ্চে বসে মাদক সেবন করছিল। মাদক সেবন করার পর তাদের আচার-আচরন বদলে যায়।

কথা হলে দুই শিক্ষার্থী বলেন, ফেনসিডিল ও ইয়াবা পাওয়া এখন বেশ কঠিন, দামও বেশি। তাই নেশার জন্য ঘুম ও ব্যাথার ট্যাবলেট ব্যবহার করেছে অনেকে। এসব ট্যাবলেট প্রেসক্রিপশন ছাড়া কিভাবে পাওয়া যায় জানতে চাইলে বলেন, বেশি দাম দিলে ফার্মেসি মালিকরা দিয়ে দেয়। এ জন্য দাম দুই থেকে তিনগুন বেশি নেয়। হাতাশা থেকে তারা নেশায় জড়িয়ে পড়েছে বলে জানান। রাসেল ফার্মেসি থেকে তারা ওষুধ ক্রয় করেছে বলে জানান।’

সম্প্রতি জেলা প্রশাসন হাসপাতাল মোড়ে রাসেল ফার্মেসিতে অভিযান পরিচালনা করে। সেখান থেকে বিপুল পরিমান টাপেন্টা ট্যাবলেটসহ ফেনসিডিল উদ্ধার করে।

এ সময় ডিবি পুলিশ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ওষুধের ব্যবসার আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে এ ফার্মেসি মালিক ফেনসিডিল ও ইয়াবা ব্যবসা করে আসছিল বলে স্বীকার করেছে। পরে ফার্মেসি মালিককে ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা জরিমানা ও ৩ মাসের কারাদন্ড ভ্রাম্যমান আদালত। এর আগে শহরের কয়েকটি ফার্মেসিতে অভিযান চালিয়ে ওষুধ উদ্ধারসহ জরিমানা করা হয়।

এদিকে শহর ছাড়াও জেলার গ্রামেও ছড়িয়ে পড়ায় প্রশাসনকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছে। জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও মাদক নিয়ন্ত্রক অধিদপ্তর এবং ড্রাগ প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছে। ফার্মেসি মালিকদের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ঘুম ও ব্যাথার ট্যাবলেট বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে। তারপরও থেমে নেই কেনাবেচা।’

বাংলাদেশ ক্যামিস্ট্র এন্ড ড্রাগিষ্ট্র সমিতি কুষ্টিয়া শাখার সভাপতি রফিকুল আলম টুকু বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে আসার পর প্রত্যেক ফার্মেসি মালিককে চিঠি দিয়ে এমবিবিএস চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ওষূধ বিক্রি করতে নিষেধ করা হয়েছে। একই সাথে সেই ব্যবস্থাপত্র সংরক্ষনের অনুরোধ জানানো হয়েছে। তারপরও বিক্রি থেমে নেই। তিন থেকে চারগুন দামে বিক্রি হচ্ছে এ ট্যাবলেট। আমরা সবাইকে সচেতন করতে কাজ করে যাচ্ছি।

কুষ্টিয়া জেলা ওষুধ তত্বাবধায়ক ওয়াহিদুর রহমান বলেন, অনেক ফার্মেসি মালিককে সতর্ক করার পরও তারা বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না। এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন বলেন, বারবার সতর্ক করেও অনেক ফার্মেসি মালিক অবৈধ কারবার করে যাচ্ছে। আমরা ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান আরো জোরদার করেছি। প্রতিদিনই কাউকে না কাউকে জরিমানা করার পাশাপাশি সতর্ক করা হচ্ছে। তারপরও অনেকেই গোপনে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সবাইকে সাথে নিয়ে বিষয়টি মোকাবেল করব। যুব সমাজকে কোন ভাবেই ধবংস হতে দেয়া হবে না।’

আর এই ধরনের ওষুধ দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে শরীরে নানা ধরনের জটিলতা তৈরি হতে পারে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

হৃদরোগ ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. বসির উদ্দিন বলেন, এ ধরনের ট্যাবলেট রোগীদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। কোন সুস্থ মানুষের জন্য এ ওষুধ ব্যবহার করা ঠিক নয়। যারা নিয়মিত ব্যবহার করে তারা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। সব সময় দুর্বল ও ঝিমুনি লাগে। স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে। এছাড়া হার্টসহ অন্যান্য অঙ্গের ওপরও ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। ’

সর্বশেষ

কুষ্টিয়ায় আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল সমর্থকদের সংঘর্ষে আহত ৭

কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল খেলা নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডার পর সংঘর্ষে জড়িয়ে অন্তত সাতজন...

কুষ্টিয়ায় শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানি, বরখাস্ত প্রধান শিক্ষককে পুলিশে সোপর্দ

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে পঞ্চম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানির মামলায় বরখাস্ত প্রধান শিক্ষককে বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর)...

কুষ্টিয়ায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২

কুষ্টিয়ায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় একটি শিশুসহ দু’জনের মৃত্যু হয়েছে।   বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে...

পাসপোর্ট সংশোধনে সরকারের নতুন নির্দেশনা

এনআইডির তথ্য অনুযায়ী পাসপোর্ট রি-ইস্যুর নির্দেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পাসপোর্ট...

আরও পড়ুন

কুষ্টিয়ায় আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল সমর্থকদের সংঘর্ষে আহত ৭

কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল খেলা নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডার পর সংঘর্ষে জড়িয়ে অন্তত সাতজন...

কুষ্টিয়ায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২

কুষ্টিয়ায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় একটি শিশুসহ দু’জনের মৃত্যু হয়েছে।   বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে...

কুষ্টিয়ায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে হোটেলে, কলেজছাত্রীর মৃত্যুর পর যুবক আটক

কুষ্টিয়ায় একটি আবাসিক হোটেলে শয্যা বিশ্বাস (১৮) নামে এক কলেজছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায়...