বহি:বির্ভাগের রোগীরা ছোটাছুটি করছে। কারও হাতে বহি:বির্ভাগের টিকিট আবার কারও হাতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট। কিন্তু বহি:বির্ভাগের চিকিৎসকের চেম্বার খোলা থাকলেও ভিতরে নেই কোন চিকিৎসক। কিন্তু খবরটি জানেন না ঐ রোগীরা।
তখন সময় দুপুর ১ টা ৪০ মিনিট। আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা: তাপস কুমার সরকার বেরিয়ে গেলেন তার কক্ষ থেকে। বললেন জরুরী প্রয়োজনে বাইরে যাচ্ছি। কিছুক্ষনের মধ্যেই ফিরে আসবো।
কিছুদর এগিয়ে গিয়ে দেখা মিললো বহি:বির্ভাগের ৮নং কক্ষ খোলা পড়ে আছে। বাইরে বেশ কিছু রোগী। ভিতরে প্রবেশ করতেই দেখা গেলো চিকিৎসক শুণ্য চেয়ার ফাঁকা পড়ে আছে। এমনকি দরজার কাছে কোন আয়াকেও দেখা যায়নি।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের শনিবারের চিত্র ছিলো এটি। শুধু এ ধরনের চিত্র শনিবারের নয়। প্রায় প্রতিদিই এমন চিত্র দেখা মেলে।
৮নং সেই কক্ষের বাইরেই বিভিন্ন পরীক্ষার রিপোর্ট ডাক্তারকে দেখাবে বলে অপেক্ষায় থাকা সায়েম নামের এক রোগীর স্বামী। তিনি ভ্যান চালক। তার স্ত্রী অসুস্থ হওয়ায় সকালেই তাকে নিয়ে হাসপাতালের বহি:বির্ভাগে ৫টাকা দিয়ে টিকিট কেটে দীর্ঘ লাইনের তার স্ত্রীকে দাঁড় করিয়ে চিকিৎসকের কাছে পৌঁছান। এসময় ঝটপট চিকিৎসক তাকে কয়েকটি রিপোর্ট (টেষ্ট) লিখে দ্রুত সেগুলো হাসপাতাল এবং বাইরে থেকে পরীক্ষা করে নিয়ে আসার কথা বলে। তাই তার হাতে কয়েক ধরনের রিপোর্ট।
তিনি জানালেন হাসপাতাল থেকে দুইটা পরীক্ষা করেছি এবং হাসপাতালে মুল ফটকের সামনে অবস্থিত কমফোর্ট ডায়াগনষ্টিক সেন্টার থেকে আরও একটি পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে চিকিৎসককে দেখাবো বলে দাঁড়িয়ে আছি। অথচ আঘাঘন্টা বাইরে দাঁড়িয়ে থেকেও সেই চিকিৎসকের দেখা পাচ্ছিনা।
সায়েম জানান, তার স্ত্রী নারগিস (৩০) পা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফোলা ও জ্বালা যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে। তাই অল্প টাকায় চিকিৎসা সেবা পাওয়ার আশায় এই হাসপাতালে এসেছেন। কিন্তু এখানে আসতে না আসতেই বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে খরচা গেলো। তবুও চিকিৎসকের আশায় বসে আছি। আজ এই চিকিৎসককে না পেলে আবারো কালকে আসতে হবে।
অভিযোগ রয়েছে, দেরীতে হাসপাতালে এসে আবার রোগী না দেখে ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের সাথে খোশগল্পে মেতে থাকা এবং নিজ প্রয়োজনে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ানোসহ নানা কাজে সময় ব্যয় করে তাকে বহি:বির্ভাগের চিকিৎসকরা। শুধু তাই নয়, যে সময়টুকু তারা রোগী দেখে ঐ সময়ের মধ্যে প্রত্যেক রোগীকে প্রয়োজন ছাড়াও বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার কাগজ হাতে ধরিয়ে দিয়ে তাদের নির্দিষ্ট ডায়াগনষ্টিকে সেন্টারে পাঠানোরও অভিযোগ রয়েছে।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের উপপরিচালক ডা: মো: আবু হাসানুজ্জামান জানান, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে সকাল ৮ টা থেকে দুপুর ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত চিকিৎসক রোগী দেখে থাকেন। বহি:বিভাগের রোষ্টার দেখে থাকেন আবাসিক মেডিকেল অফিসার(আরএমও)।
এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা: তাপস কুমার সরকার বলেন, এ ধরনের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।