কুষ্টিয়ায় গত ১৩ মাসে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ১২ জন নিহত হয়েছে। এরমধ্যে সাত জন ডাকাত দলের সদস্য বলে দাবি করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বাকিদের মধ্যে তিন জন হত্যা মামলার আসামি, নব্য জেএমবির এক সদস্য এবং এক সন্ত্রাসী রয়েছে।
সবশেষ গত বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৩টার দিকে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার উজানগ্রাম ইউনিয়নের মহিষাডাঙ্গায় মহাসড়কে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি নিহত হন। তাকে ডাকাত বলে দাবি করেছে পুলিশ। এসময় ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, একটি বন্দুক, একটি গাছকাটা করাত ও বেশ কিছু মোটা রশি উদ্ধার করা হয়। কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রতন শেখ এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এর আগে ২০১৭ সালের মার্চ মাসে বন্দুকযুদ্ধে তিন, জুলাইয়ে দুই এবং ডিসেম্বরে এক ডাকাত নিহত হয়।
পুলিশের দাবি, ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতদের ৭ জনই ডাকাত। তারা আঞ্চলিক মহাসড়কে গাছ ফেলে গাড়িতে ডাকাতি করত। তবে পুলিশের এ দাবি অন্য কোনও সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এসব ‘বন্দুকযুদ্ধের’ বেশিরভাগই নির্জন এলাকায় ঘটায় স্থানীয়াও এ বিষয়ে কোনও তথ্য দিতে পারেননি।
এর আগে গত বছরের ১০ মার্চ কুষ্টিয়ার খোকসায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মিন্টু (৪২) নামের এক ডাকাত নিহত হয়। কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী সড়কের শিমুলিয়া কুঠিবাড়ি এলাকায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’র এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে দুটি পিস্তুল, তিনটি রামদা, দুই রাউন্ড গুলি ও গাছ কাটা করাত উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের বাড়ি রাজবাড়ী জেলার পাংশায়।
গত ১৭ মার্চ কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সেলিম মোল্লা (৩২) নামে এক ডাকাত নিহত হয়। উপজেলার শেহালা আদাবাড়িয়া মাঠের মধ্যে বাঁধা বটতলা এলাকায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’র এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুটি এলজি শাটারগান, দুটি ছোরা, গুলি ও ডাকাতির সরঞ্জাম উদ্ধার করে। নিহত সেলিম মোল্লা উপজেলার মধুগাড়ী গ্রামের আলেক মোল্লার ছেলে।
গত ২৯ মার্চ কুষ্টিয়ার মিরপুরে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ রফিকুল ইসলাম রফিক (৩৮) নামে এক ডাকাত নিহত হয়। উপজেলার কুষ্টিয়া-মেহেরপুর সড়কের বারুইপাড়া ইউপির মশান কালিগাড়া ব্রিজের কাছে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে একটি এলজি, এক রাউন্ড গুলি, দুটি হাঁসুয়া ও ডাকাতির সরঞ্জাম উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত রফিকুল ইসলাম রাজবাড়ী জেলার মাছপাড়া গ্রামের আজিজ শেখের ছেলে।
গত ২৬ জুলাই কুষ্টিয়ায় পুলিশের সঙ্গে পৃথক ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সোবহান আলী (৩৭) ও হাসানুজ্জামান লালন (৩৫) নামের আন্তঃজেলা ডাকাত দলের দুই সদস্য নিহত হয়। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বাড়াদী এবং ভেড়ারামা উপজেলার দশমাইল নামক স্থানে এ দুই ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটে। নিহত সোবাহান আলী কুমারখালী উপজেলার মনোহরপুর এলাকার নুর উদ্দিনের ছেলে এবং হাসানুজ্জামান লালন গাংনীর মনোহরদিয়া গ্রামের আলীম উদ্দিনের ছেলে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি বিদেশি পিস্তুল, দুটি শার্টারগান, দুই রাউন্ড গুলি ও করাত উদ্ধার করে।
গত ২২ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ অজ্ঞাত এক ডাকাত নিহত হয়। কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী সড়কের সিটি কলেজের সামনে এ ঘটনা ঘটে। সে সময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ান শুটার গান, দুটি পাইপগান, একটি রামদা, একটি ছুরি, একটি চাইনিজ কুড়াল, শুটারগানের একটি গুলি, পাইপগানের দুটি গুলিসহ বেশ কিছু মোটা দড়ি উদ্ধার করে।
এছাড়া, গত ২১ আগস্ট পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এনামুল (৩০) নামের হত্যা মামলার এক আসামি নিহত হয়। সদর উপজেলার হরিনারায়ণপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় একটি কলাবাগানের ভেতর এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, তিনটি গুলির খোসা ও দুটি হাঁসুয়া উদ্ধার করে। নিহত এনামুল সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর এলাকার মোস্তফা মিয়ার ছেলে।
এর চার দিন পর ২৫ আগস্ট দৌলতপুরে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আরমান আলী (৩৫) নামের এক নব্য জেএমবি সদস্য নিহত হয়। উপজেলার পড়ামাদিয়া বোয়ালিয়া মাঠের মধ্যে তিন রাস্তার মোড়ে বটতলায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তুল, দুই রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগজিন ও তিনটি চাপাতি উদ্ধার করে। নিহত আরমান ভেড়ামারা উপজেলার ঠাকুর দৌলতপুর গ্রামের আছান উদ্দীনের ছেলে।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর দৌলতপুরে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আনিছুর রহমান টেনি (২৭) নামে এক সস্ত্রাসী নিহত হয়। উপজেলার পিপুলবাড়িয়া-বালিয়াডাঙ্গা মাঠে এ ঘটনা ঘটে। নিহত টেনি উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের ছাতারডাড়া গ্রামের আলম মণ্ডলের ছেলে।
১৩ অক্টোবর কুমারখালীতে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শাহিন (৩২) নামের হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত এক আসামি নিহত হয়। উপজেলার শিলাদহ ইউনিয়নের কসবা এলাকায় পদ্মা নদীর পাড়ে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শাহিন উপজেলার নূরপুর গ্রামের বাসিন্দা।
গত ২৭ অক্টোবর কুমারখালীতে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আনোয়ার হোসেন (৩২) নামের এক হত্যা মামলার আসামি নিহত হয়। উপজেলার জয়নাবাদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত আনোয়ার কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের নগর সাঁওতা গ্রামের আজমত ওরফে গামলার ছেলে।
এসব ‘বন্দুকযুদ্ধে’র বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও স্থানীয় লাল গোলাপ মানবাধিকার সংস্থার চেয়ারম্যন অ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক বলেন, ‘দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী একজন মানুষকে বিচারের মুখোমুখি করে এর সাজা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও ক্রসফায়ারের মতো ঘটনা ঘটছে। এই ক্রসফায়ার প্রথা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।’