কুষ্টিয়ায় দেশি-বিদেশি চারুশিল্পীদের নিয়ে ৬ দিনব্যাপী ক্র্যাক আন্তর্জাতিক আর্ট ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়েছে। শহরতলীর রহিমপুরে ঢাকা-কুষ্টিয়া মহাসড়কের পাশে স্মরণ মৎস্য হ্যাচারীতে শুরু হয় এ আর্ট ক্যাম্প। এটি এই আয়োজনের ১১তম আসর। বাংলাদেশ সহ বিশ্বের ৮টি দেশের প্রায় বিশ জন শিল্পী এই আন্তর্জাতিক আর্ট ক্যাম্পে অংশ নেয়।
বাংলাদেশ সহ যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, আফগানিস্তান, ভারত, নেপাল, নেদারল্যান্ড ও তাইওয়ান এর শিল্পীরা এই ক্যাম্পে অংশ নিচ্ছেন। অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা হচ্ছেন: অনুপম সাইকিয়া (ভারত), বিধ্যামান তামাং (নেপাল), বিজেন্দ্র শ্রেষ্ঠ (নেপাল), বিজিত রেঘু (ভারত), ধানজয় কুমার (ভারত), ফাতেমা হোসেনি (আফগানিস্তান), ফিওনা চেং (তাইওয়ান), ইন্দ্রানী দে (ভারত), জেনি ঘেল (নেপাল), ক্যাথরিন হামেল (অস্ট্রেলিয়া), মিল্টন ভট্টাচার্য (ভারত), পাভিত্রা মেহতা (যুক্তরাষ্ট্র), রাইনা রোডিনা ভ্যান ডার মিয়ার (নেদারল্যান্ড), রিপন কুমার দাস ধ্রব (বাংলাদেশ), সায়ন্তন সামন্ত (ভারত) এবং সরকার নাসরিন টুনটুন (বাংলাদেশ)।
কিউরেটরের দায়িত্ব যৌথভাবে পালন করছেন ভারতের শিল্পী সুরেশ কে. নায়ার এবং বাংলাদেশের শিল্পী শাওন আকন্দ। ২০০৭ সাল থেকে এই মাল্টিডিসিপ্লিনারি আর্ট ক্যাম্পটি নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। কুষ্টিয়ায় এই আর্ট ক্যাম্পটির সূচনা হয়েছিল বিভিন্ন ধরনের শিল্পী ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের উদ্যোগে, শিল্পী ও গবেষক শাওন আকন্দের নেতৃত্বে আর্ট ক্যাম্পের প্রচলিত যে ধরন-তা থেকে কুষ্টিয়ার এই আর্ট ক্যাম্পটির প্রকৃতি কিছুটা ভিন্ন। এখানে রয়েছে জীবন যাপন প্রক্রিয়ার সাথে শিল্পের সমন্বয় সাধন করার এক নিরলস প্রচেষ্টা। ক্যাম্পের আয়োজনকারীর মুলেই রয়েছে বাংলাদেশের শিল্পী শাওন আকন্দ।
তিনি বলেন, বাউল দর্শনের সঙ্গে এই আর্ট ক্যাম্পের উদ্যোগের একটি সম্পর্ক রয়েছে। বাউলদের সাধু সঙ্গ থেকে এর ধারণাটি এসেছে। স্থানীয় শিল্পকর্ম ব্যবহার করেও ভালো কিছু করা সম্ভব, লালনের দেশে এই আর্ট ক্যাম্পের মাধ্যমে আরও একবার প্রমাণিত হলো।
শাওন আরও জানান, শিল্প একটি জটিল প্রক্রিয়া এবং তা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সংস্কৃতির প্রতিটি মাধ্যমের ভেতর রয়েছে নিবির আন্তঃসম্পর্ক। শিল্পিত অনুশীলনের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে সেকারণে জ্ঞান ও সংস্কৃতির প্রতিটি ক্ষেত্রের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা জরুরি। তাই শুধুমাত্র চারুশিল্পীই নন থিয়েটার কর্মী, ফটোগ্রাফার, চলচ্চিত্র নির্মাতা, মনোবিজ্ঞানী, কবি, সাংবাদিক, অভিনেতা, সমাজবিজ্ঞানী কিংবা অন্য কোন পেশার,শাখার শিল্পাগ্রহী মানুষের জন্য এই ক্যাম্পের দরজা খোলা রাখা হয়েছে। তারাও এই আর্ট ক্যাম্পে অংশ নিতে পারেন। সৃষ্টি করতে পারেন নিজের শিল্পকর্ম এবং আস্বাদন করতে পারেন শিল্পরস।
আর্ট ক্যম্পে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে আধ্যাত্মবাদের সঙ্গে শিল্পের সমন্বয় সাধন করার নিরলস প্রচেষ্টা। ক্যাম্পের শিল্পীরা প্রধানত ইন্সটলেশন, ক্রাফট, পারফরম্যান্স নিয়ে কাজ করেছেন। শিল্প নির্মাণ উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে স্থানীয় নানা উপাদান ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ। স্থানীয় পরিবেশের সঙ্গে সমন্বিতভাবে শিল্পচর্চার ধারাকে সামনে এগিয়ে নিতেই ছিল এই আয়োজন।
বায়ু, মাটি, পানি, বাতাস ও আকাশ এই পাঁচটি বিষয়কে কেন্দ্র করে তারা এবারের আসরের আর্টক্যাম্পটিকে সাজিয়েছেন। গতবার আর্ট ক্যাম্পে অংশগ্রহণ করেছিলেন ৩০ জন। কিন্তু এবারে ২০জন। আর্ট ক্যাম্পে শিল্পীদের শিল্পকর্মের মাধ্যমে তাদের ব্যক্তিস্বাধীনতা, গোষ্ঠী স্বাধীনতা ও একান্ত নিজস্ব সত্তা ফুটে উঠেছে। তাদের অধিকাংশের কাজেই পাশ্চাত্য এবং প্রাচ্যের স্বাধীনতা বোধের বিভিন্ন পার্থক্য উঠে এসেছে।
এসব ভিন্নধর্মী শিল্প প্রদশর্নী দেখে আনন্দে উদ্বেলিত এলাকার সংস্কৃতমনা ব্যাক্তিরা। বিকেল থেকে রাত অবধি দর্শনার্থীদের জন্য খোলা রাখ হয়েছিলো। যাতে কতরে তারা এসব ভিন্নধর্মী শিল্প প্রদশর্নী দেখে আনন্দে উদ্বেলিত হতে পারে।