কুষ্টিয়া শহরতলী জগতি মন্দির পাড়ার রেললাইনের পাশে সামান্য মাছ বিক্রেতা থেকে কবিরাজীর বেশধারণ করে প্রতারণার মাধ্যমে ভন্ড মিটাউল অাজ কোটিপতি। চিকিৎসার নামে রোগীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে দোতলা বাড়ি ধন সম্পদের পাহাড় গড়েছে এই কথিত কবিরাজ।
বাড়ির সাথেই বড় একটি ঘরে শেষ প্রান্তে ঘরের মধ্যে আসন বসিয়ে বিভিন্ন গাছ, গাঁছড়া ঝাড়ফুঁক দিচ্ছেন রোগীদের। বোতলে লেবেল বিহীন ওষুধ, ফু পরা, তেল পরা, বিভিন্ন গাছ গাঁছড়া দিয়ে চিকিৎসা করেন। দূরদুরান্ত থেকে রোগীরা এসে এই চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। যা জীবনের জন্যে হুমকি সরুপ ৷
সরেজমিনে যেয়ে দেখা যায়, পৃথক পৃথক কক্ষে মহিলা ও পুরুষরোগী বসে আছে। শেষ কক্ষে কথিত ভন্ড কবিরাজ মিটাউল কুয়েতি ও সৌদিদের পোষাকের ন্যায় পোষাক পরে মুখ ঢেকে আসনে বসে বিভিন্ন রোগীদের কথা শুনছেন ও গাছ গাছড়া সহ বিভিন্ন কবিরাজি চিকিৎসা দিচ্ছেন। তার পুরো ঘর জুড়েই শতাধিক বয়মে রয়েছে বিভিন্ন গাছ গাছড়া, যার কোনটিতেই লেবেল লাগানো নেই।
মিটাউলের সাথে কথা বললে মুখ ঢেকে তিনি জানান, স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হলে ঠিক করে দেন তিনি। আরো জানান, বন্ধাত্ব, মেয়েদের সাদা স্রাপ ভাঙ্গা, জীন-ভূতের চিকিৎসা, বিয়ে হওয়ার তদবীর, নানা জটিল রোগের চিকিৎসা দেন বলে দাবী করেন।
তার শিক্ষাগত যোগ্যতা জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি ৫ পারসেন্ট পর্যন্ত পড়াশুনা করেছি । কাউকে তিনি মুখ দেখান না। দীর্ঘ আঠার বছর যাবৎ প্রতারণা চিকিৎসা দিয়ে আসছে এই ভন্ড কবিরাজ। প্রতি সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার মিটাউলের বার বসায়। সকাল ১১ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত তিনি এই চিকিৎসা করেন।
মেহেরপুর থেকে আসা কলেজ ছাত্রী আখি জানান, ২-৩ মাস আগে এখানে একবার এসেছিলাম আবার আজ এসেছি।
কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনের সামনে জৈনক গৃহিণী শাহানাজ জানান, ননদের মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না দ্রুত বিয়ের জন্যে এখানে এসেছি।
আক্তার নামে এক যুবক এসেছে পোষ্ট অফিস থেকে ১ লক্ষ টাকা হারিয়ে যাওয়া টাকার সন্ধান নিতে।
মিটাউলের স্ত্রী জানান, প্রতিদিন নিন্মতম ৫০-৬০ টি রোগী হয়। প্রতারক ভণ্ড কবিরাজ মিটাউল এইসব রোগীদের কাছে থেকে ভয়ভীতি ও জিনের আছরের কথা বলে প্রতারণা করে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তার এই সকল রোগী আনার জন্যে বিভিন্ন মহিলা দালাল নিয়োগ করে রেখেছেন বিভিন্ন এলাকায় ।
এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন ডাঃ নাজমুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি জানান, ওই কবিরাজ যে গাছ গাছাড়া ব্যবহার করছে সাধারণ মানুষ সেবন করলে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ইবাদত হোসেন জানান, কবিরাজের গাছ গাছাড়া নিয়ে এমন কোন ঘটনা ঘটলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এলাকাবাসী জানান, এক সময় মিটাউল কবিরাজ মাছের ব্যবসা করতো, ছোট খাটো টিনের ঘর ছিলো এই কবিরাজি ব্যবসায় তার কপাল খুলে গেছে সে এখন কোটিপতি ।
অনেক মহিলা এই প্রতারক কবিরাজের কাছে প্রতারিত হয়ে অর্থদন্ড দিয়েছে কিন্তু মান ইজ্জতের ভয়ে মুখ খোলেনি ।