আমার দুই হাজার টাকা গেছে তাতে কোন দু:খ নাই, আমি আমার বিধবা ভাতার কার্ড আর চাই না। এভাবেই আক্ষেপ করে বয়স্ক ভাতার কার্ড দরকার নেই বলে জানান ষাটোর্ধ্ব ফুলজান নেছা। তিনি বলেন, তারা খুব প্রভাবশালী (মহিলা মেম্বার) আমার ছেলেকে সেদিন মেরেছে। আবার যদি আপনাদের (সাংবাদিকদের) কাছে অভিযোগ করি তাহলে আমাদের বাড়ীঘর ভেঙ্গে তুলে দেবে। এর বিচার আল্লাহ করবে বলে আহাজারী করতে থাকেন তিনি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলা বটতৈল ইউনিয়নের বটতৈল ঈদগাহপাড়ার মৃত: নেকবার মুন্সীর স্ত্রী ফুলজান নেছা।
ষাট বছর পেরিয়ে যাওয়া ফুলজান নেছার স্বামী মারা গেছেন বিশ বছর আগে। এতোদিন পার হলেও সেই বিধবার কোন বয়স্ক কিংবা বিধবা ভাতার কার্ড হয়নি। জনপ্রতিনিধিরা কার্ড করে দেবে বলে আশ্বাসই দিয়েছেন তাকে। বটতৈল ইউনিয়ন পরিষদের ৪, ৫ ও ৬ নং সংরক্ষিত আসনের ইউপি সদস্য (মেম্বার) শিল্পী খাতুনের কাছে গেলে বিধবা ভাতার কার্ড করতে বিভিন্ন খরচ রয়েছে এজন্য অগ্রীম ২ হাজার টাকা লাগবে বলে জানায়। খুব কষ্টে সেই মহিলা দুই হাজার টাকা সংগ্রহ করে সেই সাথে ছবি ও ভোটার আইডি কার্ড মহিলা মেম্বারের কাছে জমা দেয়। কিন্তু টাকা নেওয়ার ৮মাস পেরিয়ে গেলেও বিধবা ভাতার কার্ড করে না দেওয়ায় গত বুধবার রাতে তার ছেলে পান দোকানী সাত্তারকে নিয়ে সেই মেম্বারের বাড়ীতে যান। এসময় সেখানে গিয়ে দেখেন একটি সালিশী বৈঠক চলছে। সেই বৈঠকে সকলের অনুমতি নিয়ে সাত্তার অভিযোগের সুরে বলেন, আমার মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়েও বিধবা ভাতার কার্ড করে দিচ্ছেনা। ঐসময় উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ তার কাছে জানতে চান কোন সে মেম্বার? তখন শিল্পী মেম্বারের নাম বলতেই মেম্বারের নির্দেশে তার স্বামীসহ তার লোকজন সাত্তারকে বেধড়ক মারপিট করে। সেই সালিশী বৈঠকে উপস্থিত থাকা একাধীক ব্যক্তি জানান, সেখানে স্থানীয় আওয়ামীলীগের সভাপতি মিজানুর রহমানে উপস্থিতিতে সাত্তারকে মারপিট করে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়।
সাত্তার অভিযোগ করে বলেন, আমার মায়ের কাছ থেকে ২ হাজার টাকা নিয়ে বিধবা ভাতার কার্ড করে দেবে। কিন্তু দীর্ঘদিন পেরেিয় গেলেও কার্ড না পাওয়ায় টাকা ফেরত চাইতে গেলে ঐ ইউপি সদস্য ও তার লোকজন দিয়ে আমাকে মারধোর করে। পরে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে আমাকে জঙ্গী বলে পুলিশকে দিয়ে ধরিয়ে দেওয়ারও হুমকি দিতে থাকেন। এসব ঘটনায় আমি ও আমার পরিবার নিরাপত্তহীনতায় ভুগছি। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বিশেষ বরাদ্দের বয়স্ক ও বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেওয়ার কথা বলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে ঐ মেম্বার শিল্পী খাতুনের বিরুদ্ধে। শিল্পী খাতুন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈল ইউনিয়ন পরিষদের ৪,৫ ও ৬ নং সংরক্ষিত আসনের ইউপি সদস্য (মেম্বার)। এদিকে গতকাল সরেজমিনে ঐ এলাকায় গেলে আরও অনেকেই এমন অভিযোগ তোলেন ওই মেম্বারের বিরুদ্ধে। বটতৈল ভাটাপাড়া এলাকার মৃত: ইয়াজ উদ্দিনের ছেলে ইয়ার আলী মৃধার কাছ থেকে বয়স্ক ভাতার কার্ড দেবে বলে ৬ মাস আগে ২ হাজার টাকা দাবী করেন। কিন্তু তিনি নগদ এক হাজার টাকা দেন এবং বাকী টাকা কার্ড পাওয়ার পরে মেম্বারকে দেবেন। মেম্বার সেসময় তাকে ১৫ দিনের মধ্যে কার্ড করে দেবে বলে প্রতিশ্র“তি দেন। কিন্তু ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও কোন কার্ড করে দিতে পারেনি। তার মতো একই এলাকার রু¯Íম আলীর স্ত্রী চায়না বেগমের কাছ থেকে এক হাজার টাকা নিয়ে বিধবা ভাতার কার্ড করে দেবে বলে আজও সেই ভাতার কার্ড করে দেয়নি। বটতৈল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, দেরীতে আমি ঐ শালিসে গিয়েছিলাম তাই মারধোর দেখতে পারিনি। এসব অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে বটতৈল ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত আসনের ইউপি সদস্য (মেম্বার) শিল্পী খাতুন কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। দাম্ভক্তির সুরে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যতো পারেন লেখেন. আমার কিছুই করতে পারবেন না। এ ব্যাপারে বটতৈল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ মোমিন মন্ডলের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, এ ধরনের অভিযোগ আমার কাছে কেউ করেনি।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা সমাজসবো অফিসার আসাফ-উদৌলার সাথে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জুলিয়া সুকায়না বলেন, এ ব্যাপারে আমার কাছে কেউ কোন অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।