কুষ্টিয়ায় অস্বাভাবিক হারে পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে নদীর পানি বিপৎসীমার পাঁচ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে আতঙ্কে জীবন কাটছে নদীতীরবর্তী এলাকার মানুষ।
কুষ্টিয়ায় পদ্মার পানি বৃদ্ধির হার কমেছে। গত ১২ ঘণ্টায় এখানে মাত্র দুই সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। তবে সেই তুলনায় পদ্মার শাখা গড়াই নদীতে পানি বৃদ্ধির হার একটু বেশি। সেখানে গত ১২ ঘণ্টায় পাঁচ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে।
পদ্মায় এখন বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে পদ্মায় হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে ২০০৩ সালে সর্বোচ্চ ১৪ দশমিক ২৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত পানির উচ্চতা বেড়েছিল। তারও আগে ১৯৯৮ সালে একবার পানির সর্বোচ্চ উচ্চতা পরিমাপ করা হয়েছিল ১৫ দশমিক ১৯ সেন্টিমিটার। গড়াইয়ে পানি বেড়ে যাওয়ায় সদর উপজেলা ও কুমারখালী উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হচ্ছে।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী পীযূষ কৃষ্ণ কুন্ডু বলেন, পদ্মায় পানি বৃদ্ধির হার অনেক কমেছে। এর আগে যেখানে ১২ ঘণ্টায় ৮ থেকে ১০ সেন্টিমিটার বাড়ছিল, সেখানে এখন মাত্র দুই সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। আশা করা যাচ্ছে, দুই এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
এদিকে কুমারখালীর শিলাইদহের কোমরকান্দি গ্রামের ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ফসলহানি, বসতবাড়ি, স্কুলসহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভাঙনের মুখে। হুমকির মুখে পড়েছে শিলাইদহের রবীন্দ্র কুঠিবাড়ী রক্ষা বাঁধ। আর সীমান্তবর্তী দৌলতপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
কুষ্টিয়ার চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ৩৫ গ্রামের ৫০ হাজার বানবাসী মানুষ বেঁচে থাকার সংগ্রাম করছে। চিলমারীর বাসিন্দারা বলছেন, বন্যার পানি সাধারণত তিন থেকে চার দিন স্থায়ী থাকে। সেখানে এবার দশ দিন হয়ে গেল। এ নিয়ে তারা খুবই আতঙ্কে আছেন। বৃদ্ধ ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাচ্ছে। পানি কমলে পানিবাহিত রোগ দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
মরিচা ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আলমগীর জানান, তার ইউনিয়নের ভুরকা এলাকায় স্লুইচ গেট ভেঙ্গে পদ্মার পানি ঢুকে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে কৃষকের বিভিন্ন ধরনের ফসল ও বাড়ি-ঘর।
ফিলিপনগর ইউনিয়নের ইসলামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহিউদ্দিন জানান, ফিলিপনগর বড়মসজিদ ও প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকা দিয়ে বাঁধ উপচে বন্যার পানি ঢুকতে থাকলে বালির বস্তা দিয়ে এলাকাবাসী তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার দুপুরে রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নের বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন কুষ্টিয়া-১ দৌলতপুর আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আ.ক.ম সারওয়ার জাহান বাদশা ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন। এসময় বন্যাদুর্গত ১৫’শ পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন তারা।
জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন বলেন, নদীর পানির উচ্চতা বাড়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে প্রতিনিয়ত রিপোর্ট পাঠানো হচ্ছে। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে প্রতি ঘণ্টায় বন্যা পরিস্থিতি মনিটরিং করা হচ্ছে। আমাদের একাধিক টিম ঘটনাস্থলে আছে। বন্যাকবলিত পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ প্রস্তত রয়েছে। প্রয়োজন হলে আরও ত্রাণ আনা হবে।
দৌলতপুর আসনের সাংসদ অ্যাড. সারওয়ার জাহান বাদশাহ বলেন, পদ্মায় হঠাৎ পানি বেড়ে যাওয়ায় ৪ ইউনিয়নের মানুষ ক্ষতির মুখে পড়েছে। বিশেষ করে চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বহু মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন। প্রতিনিয়ত তাদের খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।