কুষ্টিয়ায় পদ্মা নদী থেকে বালু বোঝায় নৌকা থেকে প্রকাশ্যে চাঁদা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বিরুদ্ধে। প্রতিদিন ২৪ঘন্টায় পালাক্রমে জোরপুর্বক এ চাঁদা করা হচ্ছে। সারা দিনে শতাধিক নৌকা বালু আনা হয় বলে জানা গেছে। কুষ্টিয়া ঘেঁষা পাবনা জেলার সীমান্ত পদ্মা নদী থেকে প্রতিদিন ব্যবসায়ীরা এ বালি কিনে নিয়ে আসছেন। দুটি স্পটে চাঁদা নিচ্ছে নেতাদের মনোনীত লোকজন। আর টাকা না দিলে মারধর করা হচ্ছে মাঝিসহ শ্রমিকদের। এ টাকার ভাগ স্থাণীয় থানা পুলিশসহ অনেকের পকেটে যাচ্ছে।
বালু ব্যবসায়ীরা জানান, জেলার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ এলাকাটি পদ্মা নদীর তীর ঘেঁষে অবস্থিত। ওপারে পাবনা জেলা। পাবনার জেলার সীমান্ত তারাপুর এলাকার পদ্মা নদী থেকে প্রতিদিন বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ী বড় ট্রলার নিয়ে এসে বালু কিনে নিয়ে যান। এখানকার মোটা বালু কদর রয়েছে আশেপাশের বিভিন্ন জেলায়।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, পাবনার এ বালু মহাল থেকে প্রতিদিন দেড় শতাধিক ট্রলার ও কার্গোতে ভর্তি বালু বিভিন্ন জেলায় যায়। বিশেষ করে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার তালবাড়িয়া ইউনিয়নের রানাখড়িয়া ধুলট মহলের ব্যবসায়ীরা পাবনার এ ঘাট থেকে বালু কেনেন বেশি। প্রতিদিন এ ধুলট মহালেই শতাধিক ট্রলার বালু আসে। এ ধুলট মহল থেকে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, রাজবাড়ি এমনকি খুলনাতেও ট্রাক বোঝায় হয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, পাবনা থেকে বালু বোঝায় দিয়ে নিয়ে আসার সময় পদ্মা নদীর কুমারখালী ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলা হয়ে মিরপুরে ঘাটে আসতে হয়। শিলাইদহ ঘাটে স্থানীয় প্রভাবশালী এক আওয়ামী লীগ নেতার ক্যাডাররা সব সময় পাহারা দেয়। তাদের কাছে দেশী অস্ত্র থাকে। শিলাইদহ ঘাটে বড় ট্রলার থেকে ২ হাজার ও ছোট ট্রলার থেকে ১ হাজার টাকা নেয়া হচ্ছে প্রতিদিন। এ ঘাটে ১০ থেকে ১৫জন ক্যাডার পালাক্রমে চাঁদা আদায় করে। নদীতে ট্রলার নিয়ে পাহার দেয় এরা। বালু বোঝাই ট্রলার মাঝ নদীতে আসলেই এরা ট্রলার নিয়ে ওইসব ট্রলার আটকে দেয়। এরপর টাকা নিয়ে ছাড়ে। না দিলে মারপিট করে।
একইভাবে সদর উপজেলার হরিপুর স্পটে টাকা তোলা হচ্ছে। এখানে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইয়াসীর আরাফাতসহ হরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জড়িত। এখানে ক্যাডাররা বসে থেকে নিয়মিত অর্থ আদায় করছেন বলে বালু ব্যবসায়ীদের অভিযোগ।
রানাখড়িয়া এলাকার বালু ব্যবসায়ী সুমন এন্টারপ্রাইজের মালিক ইমরান হোসেন বলেন, তার দুটি ট্রলার আছে। প্রতিদিন পাবনা থেকে বালু নিয়ে আসেন এ দুটি ট্রলারে। বালু নিয়ে আসতে শিলাইদহ ও হরিপুর দুটি স্পটে প্রতিদিন দুই হাজার টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাদের লোকজন এ টাকা তুলছে। টাকা না দিলে মাঝিদের মারধর করা হয়। ভয়ে কেউ কিছু বলতে পারে না।’
বালু ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, এমনিতেই বালুর দাম বেশি। তারওপর প্রতিদিন চাঁদা দিতে গিয়ে বালুর দর বেড়ে যাচ্ছে। সাধারন মানুষকে বেশি অর্থ দিয়ে এসব বালু কিনতে হচ্ছে। ৪ থেকে ৫ বছর ধরে এসব টাকা তোলা হচ্ছে।
জেলা যুবলীগের একজন নেতা বলেন, দলেরই কয়েকজন নেতা এসব অপকর্ম করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। দলের নাম ভাঙ্গিয়ে তারা এসব করছে। বিষয়টি দলের নেতারা জানলেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এমনকি প্রশাসনের লোকজনও জানে। তারপরও বন্ধ হচ্ছে না চাঁদাবজি।
আশা নামের এক ব্যবসায়ী জানান, তার চারটি ট্রলার থেকে প্রতিদিন চাঁদা নেয়া হচ্ছে। বড় ট্রলার থেকে ২ হাজার ও বাকিগুলো থেকে এক হাজার করে চাঁদা নেয়া হয়। এতে তারই প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে। মাসে প্রায় দেড় লাখ টাকা চাঁদা নিচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন। দুই দিন চাঁদা দিতে না চাইলে আমার মাঝিদের ব্যাপক মারপিট করা হয়েছে।’
স্থাণীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, প্রতিদিন গড়ে ১ লাখ টাকার মত চাঁদা উঠছে। মাসে যার পরিমান ৩০ লাখ টাকা। এ অর্থের বড় একটি অংশ যাচ্ছে আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতার পকেটে। বাকি টাকা মাসোহারা হিসেবে নেয় বিভিন্ন সংস্থা।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইয়াসির আরাফত তুষারের সাথে কথা হলে বলেন,‘ আমি কোন বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত নেই। আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ দেয়া হচ্ছে। কারা টাকা নিচ্ছে জানতে চাইলে তিনি অন্যদের ঘাড়ে দোষ চাপান।’
কুমারখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান খান বলেন,‘ বিষয়টি আমার কানেও এসেছে। তবে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ নেই। কেউ যদি অভিযোগ দেয় বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া, প্রয়োজনে দলীয় ফোরামে আলোচনা করা হবে।’
কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীবুল ইসলাম খান বলেন, বিষয়টি তার জানা ছিল না। এ বিষয়ে কেউ কোন অভিযোগ নিয়েও আসেনি। তারপরও চাঁদাবাজির বিষয়টি খতিয়ে দেখে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’