মানুষের কল্যাণে দিশার এমন উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে- আতাউর রহমান আতা। দিশা দেশের যে কোন ক্লান্তি কালে জনগনের পাশে থেকে কাজ করে যাবে- রবিউল ইসলাম।
এবার কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু আক্রান্তদের মাঝে নানা উপকরণ বিতরনের পাশাপাশি দৌলতপুরে দাঁড়াপাড়ায় ডেঙ্গু আক্রান্তদের সেবায় এগিয়ে আসল বেসরকারি সংস্থা দিশা।
বৃহস্পতিবার সকালে দিশার নির্বাহী পরিচালক রবিউল ইসলাম সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতাকে সাথে নিয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে অস্থায়ী ডেঙ্গু ওয়ার্ডে যান। সেখানে ডেঙ্গু রোগীদের খোঁজখবর নেন তারা। এরপর রোগীদের মাঝে দুধ, জুস ও দেড় লিটার করে পানি বিতরণ করেন। এরপর দৌলতপুর উপজেলার দাঁড়াপাড়ায় যান দিশার একটি দল।
এদিকে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের দাঁড়পাড়ায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিয়ে গিয়ে এবার নিজেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে এক স্বাস্থ্যকর্মি। স্থানীয় ছাতারপাড়া গ্রামের কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যকর্মি ওলিউর রহমান গত ২০ দিন ধরে দাড়পাড়া এলাকায় প্রতিদিন কাজ করছিলেন। গত বুধবার কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষা করালে তার দেহে ডেঙ্গু রোগ সনাক্ত হয়। একই হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, দাঁড়পাড়াতে ৫১ জন রোগী সনাক্ত হয়েছে। আর আড়িয়া ইউনিয়নে সনাক্ত হয়েছে অন্তত ৮০জন। এদিকে দাঁড়পাড়া এলাকায় এডিস মশা নিধন ও নিয়ন্ত্রনে সেখানে অবস্থান করা পরিবারগুলোর মাঝে ওষুধসহ বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে।
কুষ্টিয়ার বেসরকারি উন্নয়ণ সংস্থা দিশার আয়োজনে বিতরণ অনুষ্ঠানে ছিলেন দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার, সহকারি কমিশনার (ভূমি) আজগর আলী,দিশার নির্বাহী পরিচালক রবিউল ইসলাম, উপ-নির্বাহী পরিচালক নাসির উদ্দিন কায়সার, প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাইদুর রহমান, সহকারি পরিচালক মেহেদী হাসানসহ গনমাধ্যমকর্মিরা এ সময় উপস্থিত ছিলেণ।
দাঁড়পাড়া এলাকায় ৫০ জন রোগীসহ আড়িয়া ইউনিয়নে আক্রান্ত রোগীদের মাঝে এসব উপকরণ বিতরণ করা হয়। ইউএনও শারমিন আক্তার তার বক্তব্যে বলেন, পুরো দৌলতপুর উপজেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি। দাড়পাড়াতে উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি। প্রথম আলোতে সংবাদ প্রকাশের পর এই এলাকাটা সরকার বেশি নজর দিয়েছে। পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি উদ্যোগেও এখানে এডিস মশা নিধনে কাজ করছে। দিশা তার অন্যতম। দিশা এগিয়ে আসায় এর নির্বাহী পরিচালক রবিউল ইসলামকে ধন্যবাদও জানান।
দিশার পরিচালনা পর্যদের সদস্য ও সাবেক প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বলেন, বেসরকারি সংস্থাগুলো তাদের প্রতিষ্ঠানের কাজের বাইরেও সামাজিক কর্মকান্ডে এগিয়ে আসে। ঠিক তেমনি ডেঙ্গু প্রতিরোধেও দিশা এসেছে। প্রথম আলোর কুষ্টিয়া প্রতিনিধি তৌহিদী হাসানের সঞ্চালনয় স্থানীয় পূর্ব ছাতারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনমূলক সভায় চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের প্রতিনিধি শরীফ বিশ^াস,সমকাল ও ডিবিসি নিউজের প্রতিনিধি সাজ্জাদ রানা,সময় টিভির প্রতিনিধি এসএম রাশেদসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মিরা উপস্থিত ছিলেন।
এরআগে সকালে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে দিশার পক্ষ থেকে চিকিৎসাধীণ ডেঙ্গু রোগীদের মাঝে বোতলজাত পানি ও জুস বিতরণ করা হয়। চিকিৎসাধীন ৪২ জন রোগীদের মাঝে এসব উপকরণ বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা,হাসপাতালের তত্বাবধায়ক নুরুন্নাহার, চিকিৎসক আবদুল মান্নান, এএসএম মুসা কবির, রতন পাল, সাবেক উপজেলা প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম।
এসব উপকরণ বিতরণ অনুষ্ঠানে দিশার নির্বাহী পরিচালক রবিউল ইসলাম বলেন, জেনারেল হাসপাতালে আগামী ১০ দিন যত ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হবে তাদের প্রত্যেককে প্রতিদিন পাচ লিটার করে বিশুদ্ধ বোতলজাত পানি ও দেড় লিটার করে ফলে জুস দেওয়া হবে।
সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, সরকারের পাশাপাশি সকল পর্যায়ের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও ডেঙ্গু প্রতিরোধে এগিয়ে আসা উচিত। যেমনটি আজ দিশা করছে। এটা মহৎ উদ্যোগ। দিশার মতো এমন উদ্যোগে সবাই শামিল হলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা সময়ের ব্যাপার। দাঁড়পাড়ার ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে ‘ছোট্ট গ্রামে ডেঙ্গুর বড় আক্রমণ’ শিরোনামে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে ছাপা হয়। এর পরপরই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় প্রশাসন জোরালো কাজ করে যাচ্ছে।
একটি নির্দিষ্ট ছোট্ট পাড়ায় ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে সংবাদ ছাপা হলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রতিনিধি সরেজমিন তথ্য সংগ্রহ করেছে। সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র বলছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’র তত্বাবধায়নে দাঁড়পাড়াতে অস্থায়ী ক্যাম্প করা হয়েছে। সেখানে বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় ওধুধ ও মশা নিধন করা হচ্ছে। জেলায় এপর্যন্ত ৭০৭ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এরমধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় ভর্তি হয়েছে ১১ জন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৪৫ জন রোগী।