তিন মাসের বেতন বকেয়া
টানা তিন মাসের বেতন না পাওয়ায় কুষ্টিয়ায় চিনিকলের এক হাজার শ্রমিক-কর্মচারী পড়েছে চরম দুর্ভোগে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের বেতন এখনো তারা পাননি। এছাড়া ইতিমধ্যে এপ্রিল মাসের বেতনও পাওনা হয়ে গেছে। ফলে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন বাবদ প্রায় ছয় কোটি টাকা বকেয়া পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুষ্টিয়ায় কৃষিভিত্তিক একমাত্র লোকসানি চিনিকলটি কোনমতে টিকে আছে। ভরা মৌসুমে এ মিলে চিনির কাঁচামাল আখের যোগান কম থাকায় প্রতি বছর উৎপাদন কম হচ্ছে। ক্রমাগত উৎপাদন হ্রাসসহ অন্যান্য নানাবিধ কারণে লোকসান গুণতে গুনতে মিলটি এখন রুগ্ন শিল্পে পরিণত হয়েছে। এদিকে টানা তিন মাস যাবত বেতন বন্ধ থাকায় চিনিকলের এক হাজারের বেশি শ্রমিক-কর্মচারী মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। এছাড়া তাদের বকেয়া বেতন প্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তা এখনো কাটেনি।
বকেয়া বেতনের দাবিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মিলের শ্রমিক-কর্মচারীরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছে। শিগগিরই বেতন প্রদান করা না হলে শ্রমিক-কর্মচারীরা আন্দোলন কর্মসূচিতে যেতে পারে বলেও শ্রমিক নেতারা জানান।
চিনিকল কর্তৃপক্ষ শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধে উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানালেও এখনো বেতন দেয়া হয়নি। একটানা তিন মাসের বকেয়া ছাড়াও চলতি এপ্রিল মাসের বেতনেরও কোন খবর নেই। ফলে পুরো চার মাসের বেতন প্রদান নিয়ে চলছে অনিশ্চয়তা। এছাড়া বৈশ্বিক মহামারি করোনা দুর্যোগেও শ্রমিক-কর্মচারীরা পাননি সরকারি কোন সহায়তা। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে তাদের দিন কাটছে নিদারুণ কষ্টে বলে শ্রমিকরা জানান।
এদিকে শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন ছাড়াও আখ চাষিদের বকেয়া ১১ কোটি টাকা ও মিলের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের অবসর ভাতাবাবদ পাওয়া ১২ কোটি টাকা দেয়া হচ্ছে বলেও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।
বকেয়া বেতনের দাবির বিষয়ে শ্রমিক-কর্মচারীরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। অতি সম্প্রতি কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে এ বিষয়ে শ্রমিক-কর্মচারীরা স্মারকলিপি প্রদান করেন। স্মারকলিপিতে কুষ্টিয়ার একমাত্র কৃষিভিত্তিক এ শিল্প প্রতিষ্ঠানটি রক্ষাসহ শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন প্রদানে প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।
চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. আনিসুর রহমান জানান, বেতন পেয়ে পেয়ে শ্রমিক-কর্মচারীরা খেয়ে-না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। বেতন প্রাপ্তির জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ দাবি করেন।
কুষ্টিয়া চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম সরওয়ার মুর্শেদ জানান, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া মিলে ২০ কোটি টাকার মূল্যের ৩৪’শ মেট্রিক টন উৎপাদিত চিনি অবিক্রিত থাকায় বেতন প্রদানে সংকট সৃষ্টি হয়েছে।