আতঙ্কে আ.লীগ, যুব ও ছাত্রলীগ নেতারা
রাজধানী ঢাকায় ক্যাসিনো, জুয়া ও অবৈধভাবে টেন্ডার নিয়ন্ত্রণসহ নানাভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। ঢাকার বাইরেও এ অভিযান বিস্তৃতি হয়েছে। কুষ্টিয়া জেলাও এর বাইরে নেই। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বেশ কিছু নেতার বিরুদ্ধে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা নানা অপকর্ম তুলে ধরে রিপোর্ট দিয়েছেন। জেলা ও উপজেলার অন্তত ২০ নেতা কালো তালিকায় আছেন। তাদের বিরুদ্ধে সরকার ও দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। এতে করে জেলার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
ঢাকায় ক্লাবগুলোতে ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকে জেলাতেও এর প্রভাব পড়ছে। জেলায় ক্ষমতাসীন দল ও তাদের সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকে ঢাকায়ও অবস্থান করছেন। জেলায় ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে চলা হাউজি খেলাও ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সম্প্রতি দেওয়া এক বক্তব্যের পর আতঙ্ক আরও বেড়ে গেছে। ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এখন যে অভিযান হচ্ছে সেটা মাদক, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির বিরুদ্ধে। এটা সারা দেশেই চলবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলায় বিভিন্ন দপ্তরে কমবেশি টেন্ডারবাজি হয়। এ ছাড়া পদ্মা-গড়াইয়ে বালু উত্তোলন ও বিক্রির সঙ্গে বেশ কিছু আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা জড়িত রয়েছেন। এসব নেতার মধ্যে কয়েকজনকে কয়েক দিন ধরে এলাকায় দেখা যাচ্ছে না।
দলীয় কয়েকজন নেতা-কর্মী বলেন, জেলায় বালু ব্যবসা ও টেন্ডারবাজির সঙ্গে জড়িত নেতাদের মধ্যে যাঁরা অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন, তাঁরা অনেকেই ঢাকায় অবস্থান করছেন। এঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা রয়েছেন।
গত শুক্রবার চাঁদাবাজির মামলায় সদর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান ও পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান সুজন গ্রেপ্তার হন। বর্তমানে তাঁরা কারাগারে আছেন। আরও দুই যুবলীগ নেতা আত্মগোপনে আছেন। পদ্মা ও গড়াইয়ে অন্তত ১০টি বালুঘাট আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা নিয়ন্ত্রণ করেন। এসব ঘাট থেকে প্রতিনিয়ত চাঁদাবাজি হয়।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে চলা জেলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে হাউজি খেলা বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। রাইফেলস ক্লাবে প্রতি সোম ও মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর হাউজি খেলা চলত। গত সোম ও মঙ্গলবার হঠাৎ করে এসব খেলা বন্ধ হয়ে যায়।
গোয়েন্দা সংস্থার ওই সুত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকায় কুষ্টিয়াতেও বেশ কিছু নেতা আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ ছাড়াও যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা রয়েছে। যারা চরমপন্থিদের সাথে আঁতাত করে বিভিন্নভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। তারা দলকে ব্যবহার করে ফায়দা লুটছে। এদের বিতর্কিত কাজ কর্মে দল ও সরকারের বদনাম হচ্ছে। এ কারনে এদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেয়া হবে। আগামী কাউন্সিলেও এর প্রভাব পড়বে।
এসব নেতাদের কোথায় কার কি পরিমান সম্পদ, কয়টি ফ্লাট এবং ব্যাংকে কার কত অর্থ আছে তারও হিসাব রয়েছে। এসব প্রধানমন্ত্রীর কাছেও পাঠানো হয়েছে। জানাগেছে, শহর, সদর ও জেলা যুবলীগের ৫ নেতার নাম এ তালিকায় রয়েছে। এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ তিন নেতার নামও আছে। যারা নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িত।
জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতা বলেন, দলের মধ্যে টেন্ডারবাজ, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী রাখা যাবে না। যারা এসব করে তাদের ব্যাপারে কোনো ছাড় নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বলেন কুষ্টিয়া জেলাতেও এ ধরনের অভিযান চালানো হোক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, চাঁদাবাজ ও টেন্ডারবাজদের নজরে রাখা হচ্ছে। তাদের সম্পদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি বন্ধে অভিযান চলবে।