কুষ্টিয়া সদর ও ভেড়ামারা উপজেলার ১৮টি এলাকাকে রেড জোন ঘোষণার পর সেসব এলাকায় আজ বৃহস্পতিবার থেকে ২১ দিনের কঠোর লকডাউন শুরু হচ্ছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুবায়ের হোসেন চৌধুরী জানান, জনগনের মধ্যে পরিস্থিতির ভয়াবহতা সর্ম্পকে ধারনা না এলে এ রেড জোন’ লকডাউন কোন মুল্যই বহন করবে না। জনসাধারনের সচেতনতা খুবই দরকার বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, চেষ্টার সামান্য কোন ফাঁক রাখা হচ্ছে না। এখন বাদবাকী নির্ভর করছে জনগনের উপর। তবে পুলিশ কঠোর অবস্থানে থাকবে বলে তিনি জানান।
কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ গোলাম মোস্তফা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান, অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয়, আমাদের দেশে করোনা শনাক্ত হওয়ার ১০১ তম দিনে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে রেকর্ড ৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর, নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৮৬২ জন করোনা রোগী।
এমতাবস্থায় সর্বসাধারণের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, সিভিল সার্জন কুষ্টিয়া কার্যালয়ের সূত্রমতে, কুষ্টিয়া পৌরসভার ১, ২, ৫, ৬, ৭, ১৮, ২০ নং ওয়ার্ডসমূহ এবং কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়ন রেড জোন হিসেবে ঘোষিত হয়েছে যাহার প্রেক্ষিতে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ সংক্রান্ত জেলা কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উক্ত এলাকাসমূহ আগামী ১৮ জুন হতে পরবর্তী ২১ দিনের জন্য লকডাউন ঘোষণা করা হল।
তবে উক্ত লকডাউনকালীন সময়ে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে যে:
১) করোনা আক্রান্ত সাধারণ রোগী ( গুরুতর/ ক্রিটিকাল অবস্থায় নয়) বাসায় বসে টেলিমেডিসিন এর মাধ্যমে ডাক্তারের নিকট হইতে চিকিৎসা সেবা নিবেন ।চিকিৎসা নেওয়ার একপর্যায়ে সমস্যা বিবেচনায় ডাক্তারের পরামর্শে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে পারবেন।
২) মাস্ক ব্যতীত এবং প্রয়োজন ব্যতিরেকে কোন ব্যক্তি বাহিরে বের হবেন না।
৩) রেড জোন ভুক্ত এলাকা থেকে কোন ব্যক্তি কোনক্রমেই এক ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডে যেতে পারবেন না।
৪) করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিকে মানসিকভাবে সাহায্য করতে হবে , কোনভাবেই কোন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি যেন নিগৃহীত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে আমাদের সবাইকে। একটি কথা মনে রাখতে হবে আমি আপনি অথবা আপনার পরিবারের যে কারোরই করোনা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তাই করোনা আক্রান্ত রোগী যেন মানসিক সাপোর্টটি সঠিকভাবে পায় এবং দ্রুত সুস্থ্য হয়ে উঠতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।
শহরের যেসকল এলাকা লকডাউন থাকবে:-
✓১নম্বর ওয়ার্ড – কমলাপুর থানাপাড়া আংশিক
✓২ নম্বর ওয়ার্ড – কুঠিপাড়া থানাপাড়া আংশিক
✓৫নম্বর ওয়ার্ড – আদর্শ পাড়া চৌড়হাস ক্যানাল পাড়া কোটপাড়া আংশিক
✓৬ নম্বর ওয়ার্ড -হাউজিং ব্লক এবিসি ডি-ব্লক আংশিক
✓৭ নম্বর ওয়ার্ড – কালিশংকরপুর
✓১৮নম্বর ওয়ার্ড – উদিবাড়ি মজমপুর
✓২০ নং ওয়ার্ড- চৌড়হাস আংশিক জগতি মন্ডলপাড়া কুমারগাড়া চেচুয়া। (হাইওয়ে ব্যতীত রেড জোন ভুক্ত প্রত্যেক ওয়ার্ডের অলিগলি সব রাস্তাই বন্ধ থাকবে এবং এই সকল বন্ধের মানে আপনাদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখা নয়, আপনাদের কল্যাণার্থে রাস্তাঘাট বন্ধ থাকবে)
এদিকে ভেড়ামারার বাহিরচর ইউনিয়নের ১৬ দাগ, ১২ দাগ, চাঁদগ্রাম ইউনিয়নের আংশিক ও পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের আংশিক এলাকা সম্পূর্ণ লকডাউন করা হয়েছে। এ সময় উপজেলার নির্বাহী অফিসার সোহেল মারুফ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ভেড়ামারা সার্কেল ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ভেড়ামারা থানা ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। লকডাউন আজ সকাল ৬ ঘটিকা হতে কার্যকর হবে।
মঙ্গলবার দুপুরে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির এক সভা শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার থেকে এসব এলাকা পুরোপুরি লকডাউন করে দেয়া হবে। ইতিমধ্যে রূপরেখা তৈরি করে গণবিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করে মাইকিং করা হয়েছে পুরো শহরে।
মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সভার সভাপতিত্ব করেন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক মৃণাল কান্তি দে। জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভায় উপস্থিত ছিলেন কমিটির সদস্য সচিব ও সিভিল সার্জন এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও কুষ্টিয়া চেম্বারের সভাপতি হাজী রবিউল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) আজাদ রহমান, কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা, কুষ্টিয়া পৌরসভার প্যানেল মেয়র মতিয়ার রহমান মজনু, সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার জুবায়ের হোসেন চৌধুরী, ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল মারুফসহ রেডজোন চিহিৃত এলাকার জনপ্রতিনিধিরা।
প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী সভা শেষে সভার সভাপতি মৃণাল কান্তি দেন বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে জেলার ১৮টি এলাকায় কড়া লকডাউন বাস্তবায়ন করা হবে। এ ব্যাপারে গণবিজ্ঞপ্তি প্রচারের জন্য তৈরি করা হচ্ছে।
সভার শুরুতে সিভিল সার্জন এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম জানান, কোভিড-১৯ সংক্রমণ, প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে জেলার ১৮টি এলাকা রেডজোন ঘোষণা করা হল। এলাকা ভিত্তিক জনসংখ্যা ও সেখানে রোগী সংখ্যা বিবেচনা করে জোন নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ১৪ দিনে কোন এলাকায় প্রতি লাখে ১০ জন রোগী শনাক্ত হলে সেখানে রেডজোন হিসাবে চিহিৃত করা হয়েছে।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ এ এস এম মুসা কবির বলেন, জেলায় এখন পর্যন্ত ২৭৩ জনের শরীরে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। সুস্থ হয়েছেন ৭১ জন। মারা গেছেন একজন। ঈদের পর ৭৫ শতাংশ রোগী শনাক্ত হয়েছে। বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন জেলায় ১২-১৩ জন রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা স্বাস্থ্য বিভাগের আওতার বাইরে চলে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এবারের লকডাউন হবে প্রকৃত লকডাউন। রেডজোন এলাকায় কঠোর থেকে কঠোরভাবে সরকারি বিধি নিষেধ মানাতে যা যা করা প্রয়োজন তার সবই করা হবে।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম বলেন, লকডাউন বাস্তবায়নে সব রকম ব্যবস্থা নিতে হবে। কথায় না বুঝলে প্রয়োজনে লাঠিপেটা করে মানুষকে মানতে বাধ্য করতে হবে। ২১ দিনের কঠোরতা শেষে ভালো ফল আসতে পারে।
এ সময় কয়েকজন কাউন্সিলর লকডাউন এলাকায় নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বা কাঁচা বাজারের প্রসঙ্গ উঠালে সভার শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, প্রত্যেক এলাকার জনপ্রতিনিধিরা কাঁচাবাজার ভ্যানগাড়িতে এলাকায় নেবার ব্যবস্থা করবেন। টাকার বিনিময়ে বিক্রি করবে। এছাড়া গরীব অসহায়দের জন্য সাধ্যমত ত্রাণের ব্যবস্থা করা হবে।
সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়, রেডজোন এলাকার মানুষ কোনভাবেই অন্য এলাকায় যেতে বা ওই এলাকায় কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। তবে জরুরি সেবার আওতায় থাকা দপ্তরের লোকজন এর আওতার বাইরে থাকবে।