কুষ্টিয়ায় একটি প্লাইউড কারখানায় অগ্নিদগ্ধ চার শ্রমিকের একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চান্নু কুমার দাসের (১৮) মৃত্যু হয়।
হাসপতালে সঙ্গে থাকা চান্নুর মামা সাধন কুমার দাস একথা জানান।
কারখানা শ্রমিক চান্নু কুমার কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বারখাদা হাট এলাকার দাসপাড়া গ্রামের অমল কুমার দাসের ছেলে।
ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকের বরাত দিয়ে সাধন কুমার দাস বলেন, অগ্নিদগ্ধ অপর তিনজনের মধ্যে মেহেদী নামের একজনের অবস্থা সংকটাপন্ন। অন্য দুই রোগী রায়হান ও সাজেদুল আশঙ্কামুক্ত।
সাধন জানান, গত শুক্রবার ভোর রাত সোয়া ৩টার সময় কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়ক সংলগ্ন বারখাদা এলাকার উনল্যান্ড নামের প্লাইউড কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে কর্মরত চার শ্রমিক দগ্ধ হন। তাদের কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎকরা তাৎক্ষণিক ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানোর পরামর্শ দেন।
ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের চিকিৎসরা জানিয়েছেন গত শুক্রবার কুষ্টিয়া থেকে আগত অগ্নিদগ্ধ ৪শ্রমিকের মধ্যে চিকিৎসাধীন চান্নু নামে রোগীর মৃত: ঘোষনা করা হয়েছে। অপর তিনজনের মধ্যে মেহেদী নামের রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হলেও অন্য দুই রোগী রায়হান ও সাজেদুলের অবস্থার কোন অবনতি হয়নি।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার ভোর রাত সোয়া তিনটার সময় কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়ক সংলগ্ন বারখাদা এলাকার উনল্যান্ড নামক প্লাইউড কারখানার ভিতরে সংঘটিত ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে কর্মরত ৪শ্রমিক অগ্নিদগ্ধ হন। গুরুতর আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎকরা তাৎক্ষনিক রোগীদের ঢাকা মেডিকেল বার্ন ইউনিটে রেফার্ড করেন।
তবে এই অগ্নিকান্ডের ঘটনাটিকে ফায়ার সার্ভিস, কারখানা কর্তৃপক্ষ ও ভুক্তভোগী শ্রমিক পরিবারের পক্ষ থেকে ভিন্ন ভিন্ন কথা বলছেন।
কুষ্টিয়া ফায়ার সার্ভিসের ষ্টেশন ইনচার্জ আলী সাজ্জাদ বলেন, অগ্নিকান্ডটি ভয়াবহ ছিলো যা নিয়ন্ত্রনে ফায়ার সার্ভিসকে সাড়ে ৫ঘন্টা কাজ করতে হয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে তিনি জানান, শুনেছি আগুনটি লেগেছিলো সর্ট সার্কিট থেকে।
ঘটনার দিন বেলা ১১টায় কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা তুহিন জোয়ার্দার গণমাধ্যমকে বলেন, সামান্য ছোটখাটো একটা আগুন লাগার ঘটনায় ৪জন শ্রমিকের গায়ে ছিটে ফোটা আগুনের ফুলকি লেগে একটু ফোস্কার মতো আহত হয়েছে। তাদের আমরা হাসপাতালে পাঠিয়েছি। এটা নিছক একটা দুর্ঘটনা মাত্র। ঘটনাস্থলের ছবি বা ফুটেজ নেয়ার কিছু নেই। সেখানে সবকিছু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে প্রডাক্ট কন্টিনিউ করছে। সে কারনে ভিতরে যাওয়া যাবে না। তবে তিনি অগ্নি নির্বাপনে যথাযথ ব্যবস্থা নেই ফায়ার সার্ভিসের এমন মন্তব্যকে নাকচ করে দেন।
শনিবার সরেজমিন আহত শ্রমিকদের গ্রামের বাড়ি যুগিয়া বারখাদা হাটের পশ্চিম পাশর্^স্ত দাসপাড়া ও মন্ডল পাড়া এলাকার বাসিন্দা শ্রমিক চুন্নু, মেহেদী ও সাজেদুলের বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের সাতে কথা বললে তারা জানায়, যে মেশিনটায় বিস্ফোরন ঘটে আগুন লেগেছিলো সেই একই মেশিনে কয়েকদিন আগেও এজাতীয় ঘটনা ঘটেছিলো।
ঘটনার দিন আগের সিফটের শ্রমিকরা ছুটি করার সময় নতুন যোগদানকারীদের সতর্ক করেছিলে- ‘সাবধানে কাজ করিস, মেশিনের অবস্থা কিন্তু ভালো না, অঘটন ঘটতে পারে’। এমন সতর্ক করেছিলো সিফট শেষে ছুটি করে যাওয়া সহকর্মীরা। সে কারণেই এই অগ্নিকান্ডের ঘটনাটিকে কারখানা কর্তপক্ষ গোপন করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন তারা।