১৯৬৮ সাল ১৮ই ফেব্রুয়ারী, ১৩৭৫ বঙ্গাব্দ কু্ষ্টিয়ার প্রথম শহীদ মিনার নির্মান করেছিলেন কুমারখালীর প্রথম স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলনকারী তৎকালীন ছাত্রলীগ সভাপতি ও স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম হান্নান। তিনি নিজেই শহীদ মিনারের নকশাকারকও ছিলেন। কুমারখালীর জে এন হাই স্কুল মাঠে ভেটুল গাছ তলায় শহিদ মিনার নির্মান করেছিলেন।
সেসময় তার সাথে ছিলেন নন্দ গোপাল বিশ্বাস, অ স ম ওয়াহেদ পান্না,মসলেম,বজলুল করিম টগর,ফজলুল করিম নান্নু ছাত্রলীগের কিছু নেতা এবংতৎকালীন নারী নেত্রী রওশন আরা বেগম নীলা।সার্বিক সহযোগিতা করেছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম গোলাম কিবরিয়া,মুন্সী রসিদার রহমান বিশ্বাস এবং কুমারখালী বাজারের কিছু ব্যবসায়ী। ১৯৬৮ সালে ২১ শে ফ্রেরুয়ারি শহীদ মিনারটি মরহুম গোলাম কিবরিয়া ফুল দিয়ে ভাষা শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে ঔ ভাষা শহিদ মিনার উদ্ভোদন করেছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে মু্ক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী ঐ শহিদ মিনারটি ভেঙ্গে ফেলেছিল। এই সম্মন্ধে শহিদ মিনারের নকশা ও নির্মানকারী বীর মু্ক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম হান্নানের সাথে কথা বললে তিনি জানান ১৯৬৮ সালে ২১শে ফেব্রুয়ারী তিন দিন আগে হঠাৎ শহিদ মিনার তৈরি কারার চিন্তা মাথায় আসে সেই রাতে অতি গোপনে আমি, নন্দ, মসলেম, পান্না, ছোট ভাই টগর, নান্নু,রওশন আরা নীলা সহ ছাত্রলীগের কয়েকজন সদস্য আমার বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা আর বাজারের কিছু ব্যবসায়ী কাছ থেকে টাকা নিয়ে কুমারখালী জে এন স্কুলের মাঠে পড়ে থাকা কিছু ইট দিয়ে রাতারাতি জে এন হাই স্কুলের ভেটুল তলায় কু্ষ্টিয়ার প্রথম শহিদ মিনার তৈরি করে ছিলাম।
শহিদ মিনার তৈরি করতে এলঙ্গীপাড়ার বাহাউদ্দিন রাজমিস্ত্রি দুই টাকা হাজিরায় কাজ করেছিলেন। তখন সিমেন্ট চার টাকা বস্তা ছিল। ১৯৭১ সালে মু্ক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্থানী মিলিটারীরা কুষ্টিয়ার প্রথম শহিদ মিনারটি ভেঙ্গে দেয় তারপর ৭১ সালে দেশ স্বাধীনের পরে তিনি ওখানে আরো একটি শহিদ মিনার নির্মান করেন। রেজাউল করিম হান্নান আরো বলেন তিনি কুমারখালীতে তিনটি শহিদ মিনার ও একটি মুক্তিযোদ্ধা মন্চ নির্মান করেছেন।একটি শহীদ মিনার ৭১ সালে পাকিস্থানী বাহিনী ভেঙ্গে ফেলেছে। আর দুইটির একটি কুমারখালীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার আর একটি শহিদ মিনার কুমারখালীর উপজেলা পরিষদের পিছনে মু্ক্তিযোদ্ধা কবরের পাশে অবস্হিত।
তিনি আরো বলেন যা কিছু করেছি দেশকে ভালবেসে করছি দেশের কাছ থেকে কোন কিছু পাওয়ার জন্য না বরং সোনার বাংলাদেশ গড়ার জন্য করেছি এমপি মন্ত্রী হওয়ার জন্য না। দেশের জন্য কাজ করতে চাইলে এম পি মন্ত্রী না হলে করা যায়।আমরা তাই করেছি। আজকাল একুশে ফেব্রুয়ারী বলেন আর বিজয় দিবস বলেন সব কিছুর ভিতর শুধু পোশাকি বা দেখানোর জন্য করে। আগে শহিদ মিনারে সারারাত গান হতো মানুষ জেগে গান শুনতো ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতেন মানুষের ভিতর দেশ প্রেমের জাগরন দেখতে পেতাম। আর এখন মানুষ শুধু ছবি তুলে চলে যাই আর প্রকৃত দেশপ্রেমিক শ্রদ্ধাবোধ খুব একটা মানুষের মধ্যে দেখতে পাইনা।
নতুন নেতৃত্বেদের ভিতর দেশের থেকে ব্যক্তি স্বার্থ বেশি দেখি। একুশে ফেব্রুয়ারীতে আমাদের সময় বাড়ি থেকে খালিপায়ে হেঁটে যেতাম প্রভাত ফেরীর গান করতে করতে আর এখন প্রায়ই দেখি অনেকেই জুতা পড়ে শহিদ মিনারে উঠে পড়ে। আরো দুঃখজনক সে সময় যারা শহিদ মিনার তৈরি করতে বাঁধা দিয়েছিল স্বাধীনতা বিরোধীতা করেছিল তারাই আজকাল শহিদ মিনারে আগে ফুল দেয়। এটাই আমাদের লজ্জা !
আমাদের বেঁচে থেকে এগুলো দেখতে হয় !!
রেফুল করিম