শীর্ষ চরমপন্থি নেতা মুকুলের সাথে কলেজ অধ্যক্ষের যৌথ ঠিকাদারি ব্যবসা, ভয়ে মুখ খুলছে না কেউ।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় প্রায় ৮ কোটি টাকা ব্যায়ে ৮ কিলোমিটারের বেশি একটি সড়ক সংস্কার কাজ চলছে। তবে এ সড়ক সংস্কার কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করাসহ দরপত্রের শর্তানুযায়ী কাজ হচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশের তালিকাভুক্ত গণমুক্তিফৌজের শীর্ষ চরমপন্থি নেতা আমিনুল ইসলাম মুকুলের সাথে যৌথভাবে সড়ক সংষ্কারের কাজটি করছে দৌলতপুর কলেজের অধ্যক্ষ সাদিকুজ্জামান সুমন। এ কারনে ব্যাপক অনিয়ম হলেও কেউ ভয়ে মুখ খুলতে পারছে না।
এলজিইডি অফিস সূত্রে জানাগেছে, কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার তারাগুনিয়া জিসি ডাংমড়কা আরএন্ডএইচ সড়ক পূর্ণবাসন করণ কাজের জন্য ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে টেন্ডার আহবান করা হয়। বন্যা দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ পল¬ী সড়ক অবকাঠামো পুনবার্সন প্রকল্প থেকে সড়কটি সংস্কারের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়। এ জন্য প্রাক্কলিত মূল্য ধরা হয় ৭ কোটি ৭৯ লাখ ৫৭ হাজার ৫৮৩ টাকা। প্রায় ৮কিলোমিটার সড়ক সংস্কারে এ ব্যায় ধরা হয়। তবে চুক্তি হয়েছে ৭ কোটি ৭০ লাখ ৯৯ হাজার ৪৩৫ টাকায়।
জেভি (জয়েন্ট ভেনচার) তিনটি ঠিকাদারি ফার্মকে কাজটি দেয়া হয়। কার্যাদেশ পাওয়া ফার্ম তিনটি হলো এসএইচজে-এসকেএস ও এসএইচই-জেভি। এসএইচজে-সাইফুল ইসলাম জোদায়াদ্দার, চুয়াডাঙ্গা। এসকেএস-সাদেকুজ্জামান সুমন, দৌলতপুর ও এসএইচই- সৈকত এন্টারপ্রাইজ, কুষ্টিয়া সদর। সৈকত হচ্ছে চরমপন্থি নেতা মুকুলের ছেলে। এই নামে লাইসেন্স করে মুকুল ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রভাব বিস্তার করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারি কাজ করে আসছে। বিষয়টি অনেকে জেনেও নিশ্চুপ রয়েছে।
যৌথভাবে তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে কার্যাদেশ দেয়া হলেও কাজটি একাই বাস্তবায়ন করছেন দৌলতপুর কলেজের অধ্যক্ষ সাদিকুজ্জামান সুমন। এজন্য তিনি একাই এলজিইডির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। তবে চরমপন্থি মুকুলসহ অন্য দুই ঠিকাদারের শেয়ার রয়েছে। মুকুলের প্রভাব কাজে লাগিয়ে সুমন কাজ করছে।
এলজিইডি সূত্র জানিয়েছে, গত ২৭ ফেব্র“য়ারি চুক্তির পর ৫ মার্চ কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাজটি চলতি বছরের ১ আগষ্ট শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে কাজের ৩০ ভাগের কিছু বেশি শেষ হয়েছে মাত্র।
সরেজমিন সড়কটি ঘুরে দেখা গেছে, কাজটি শুরুর পর থেকেই ব্যাপক অনিয়ম শুরু হয়েছে। কলেজ অধ্যক্ষ সাদিকুজ্জামান সমুন প্রভাব খাটিয়ে কোন রকমে জোড়াতালি দিয়ে কাজ শেষ করার চেষ্টা করছেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ অত্যন্ত ধীর গতিতে কাজটি চলছে। ট্রাক্টর দিয়ে সড়ক খুড়ে পুরাতন ডাস্ট ব্যবহার করেই সড়কটির কাজ করা হচ্ছে। এছাড়া নিন্মমানের ইটসহ নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে সড়কটি সংষ্কার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। তবে বিষয়টি নিয়ে কেউ ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না। এলজিইডির প্রকৌশলীরাও সুমনের কাছে অসহায়।
দৌলতপুরে এলজিইডির কাজ করেন এমন এক ঠিকাদার বলেন, চরমপন্থি নেতা মুকুলের নাম ব্যবহার করে সড়কটির কাজ করছেন সাদিকুজ্জামান সুমন। পুলিশের খাতায় পলাতক গণমুক্তিফৌজের শীর্ষ চরমপন্থি নেতা আমিনুল ইসলাম মুকুল জেলার সব সরকারি দপ্তরে প্রভাব বিস্তার করে ঠিকাদারি কাজ করে যাচ্ছেন। তার ছেলে সৈকতের নামে ঠিকাদারি লাইসেন্স করে ভয়ভীতি দেখিয়ে বেশির ভাগ কাজ নিজের নামে করে নিচ্ছেন। তার হয়ে কলেজ অধ্যক্ষ সাদিকুজ্জামান সুমনসহ অন্য আরো কয়েকজন ঠিকাদার কাজ করছেন। আর মুকুল এ কাজে সুমনের পার্টনার হওয়ায় ভয়ে কেউ কিছু বলতে পারছেন না।
দৌলতপুর উপজেলা এলজিইডির এক প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,‘ সড়কের কাজ নিয়ে কিছু বলার মত অবস্থা নেই। অনেক কিছু দেখেও না দেখার ভান করে থাকতে হচ্ছে। ওই প্রকৌশলী আরো বলেন, সমুনের চাচা ছিলেন এলজিইডির যুগ্ম সচিব। সেই সময় থেকে সমুনের উত্থান। তিনি নামে বেনামে বহু কাজ করে আসছেন। চাচা অবসরে যাওয়ার পরও তার প্রভাব রয়েছে।’
স্থাণীয় এক জনপ্রতিনিধি জানান,‘ কাজ ধীরগতিতে চলায় বিভিন্ন এলাকায় লোকজনের চরম দুর্ভোগ হচ্ছে। অনেক জায়গায় মালামাল পড়ে আছে। কাজ একদিন হয়তো আবার দুইদিন বন্ধ থাকে। এতে করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে এটা কেউ মুখ খূলে বলতে পারছে না।’
কাজের ঠিকাদার ও দৌলতপুর কলেজের অধ্যক্ষ সাদিকুজ্জামান সুমন দাবি করে বলেন, আমি ও চুয়াডাঙ্গার সাইফুল ইসলাম নামে একজন ঠিকাদার মিলে কাজটির জন্য দরপত্র দাখিল করি। পরে চরমপন্থি মুকুলের লোকজন ভয় দেখিয়ে তাকে এ কাজের পার্টনার করে। আমিই মূল ঠিকাদার। মুকুল নামে মাত্র ঠিকাদার। এ কাজে মুকুলের কোন ইনভেস্ট নেই। অভিজ্ঞতা ও অন্য কাজে সুবিধা পাওয়ার জন্য মুকুল তার ক্যাডার দিয়ে সড়ক নির্মাণ কাজে পার্টনার হয়েছে। মুকুলের প্রভাব বিস্তার করে আমি কোন কাজ করছি না। সিডিউল মোতাবেক কাজ হচ্ছে বলে সুমন দাবি করেন।’
দৌলতপুর এলজিইডি অফিসের প্রকৌশলী জিল্লুর রহমান বলেন, সাদিকুজ্জামান কাজটি করলেও তারে সাথে আরো দুই পার্টনার রয়েছে। সৈকত এন্টারপ্রাইজ (চরমপন্থি মুকুলের ছেলে) ও চুয়াডাঙ্গার সাইফুল ইসলাম নামে আরো দুই ঠিকাদার রয়েছে। আর কাজে অনিয়মের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাজে কোন অনিয়ম হচ্ছে না।’