বছরের দুই ঈদে বাড়তি চাপ আর ভাড়া নৈরাজ্য কোনো নতুন বিষয় নয়। তবে ঈদ এবং ঈদের ছুটি শেষ হলেও বাসের বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধ হয়নি কুষ্টিয়া-ঢাকা রুটে। এ রুটে চলাচলকারী পরিবহনগুলোর অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মুখে মুখে। বাড়তি ভাড়া নেওয়ার সঙ্গে যাত্রীদের হয়রানিসহ পরিবহন সংশ্লিষ্টদের এমন আচরণে ভোগান্তিতে পড়ছেন ঢাকামুখী মানুষ।
শুক্রবার (১৪ জুন) ঢাকা-কুষ্টিয়া রুটে চলাচলকারী বিভিন্ন পরিবহন কাউন্টার থেকে টিকিট নিতে এসে এসব অভিযোগ করেন যাত্রীরা।
যাত্রীদের অভিযোগ, ঈদের সময় দুই একদিন বাড়তি ভাড়া নেওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু ঈদের ৯ দিন পরেও বাড়তি ভাড়া নেওয়াটা অযৌক্তিক। এছাড়া পরিবহন সংশ্লিষ্টরা ইচ্ছে করেই পরিবহন স্বল্পতা দেখিয়ে যাত্রীদের হয়রানি করে। ফেরার পথে যাত্রীদের মালামাল নিয়ে পরিবহন শ্রমিকদের তালবাহানা রয়েছে। ফলে অতিরিক্ত ভাড়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কর্মস্থলে ফেরা যাত্রীরা। এতে ভাড়া বৃদ্ধির প্রবণতামুক্ত পরিবহন আইনের দাবি তুলেছেন যাত্রীরা।
তবে আগামী রোববার (১৬ জুন) পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার বিষয়টি অব্যহত থাকবে বলে জানান পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকাগামী জাকিরুল ইসলাম নামের এক যাত্রী বলেন, ‘ঈদের অযুহাতে প্রতিবছর বাসের ভাড়া বাড়ানো হয়ে থাকে। মানুষ ঈদের সময় একটু বেশি ভাড়া দেওয়ার বিষয়টা স্বাভাবিকভাবে দেখে। ঈদ শেষ হলেও এখনো কমানো হয়নি বাস ভাড়া।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, এসবি সুপার ডিলাক্সে (ননএসি) ৪৫০ টাকার ভাড়া বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫৫০ টাকা, আরএন-এ (এসি) ৮০০ টাকার ভাড়া ১ হাজার ৩০০ টাকা এবং হুন্দাই (এসি) বাসে ১০০০ টাকার ভাড়া ১ হাজার ৬০০ টাকা, শ্যামলী পরিবহনে (ননএসি) ৪৫০ টাকার পরিবর্তে ৫৫০ টাকা, হানিফ এন্টারপ্রাইজে (ননএসি) ৪৫০ টাকার পরিবর্তে ৫৫০ টাকা, আরকে পরিবহনে (ননএসি) ৪৫০ টাকার পরিবর্তে ৫৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।
অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে হানিফ এন্টারপ্রাইজের কুষ্টিয়ার কাউন্টার মাস্টার তানভীর আহমেদ বলেন, ‘মূলত কুষ্টিয়া থেকে ঢাকার বাস ভাড়া ৫৭৮ টাকা। কিন্তু বাস কোম্পানির মালিকরা ভর্তুকি দিয়ে ৪৫০ টাকা যাত্রীদের কাছ থেকে নেয়। ঈদের সময় অতিরিক্ত লোকসান সামাল দিতে ভাড়া কিছুটা বাড়তি রাখা হয়।’
আগামী রোববারের পর আর অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হবে না বলে জানান তিনি।
অভিযোগ রযেছে, গত ৮ জুন রাত সাড়ে দশটায় এসবি (ননএসি) বাস থেকে এক যাত্রীর দুটি লাগেজ হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরিবহনটিতে এ ধরনের লাগেজ, মালপত্র হারানোর ঘটনা নিত্যদিনের ব্যপার বলে অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তোভুগী অনেক যাত্রী।
এসবি পরিবহনের লাগেজ হারিয়ে ফেলার অভিযোগকারী পাপ্পু বলেন, ‘যাত্রাপথে আমার সঙ্গ পাঁচটি লাগেজ ছিল। ঢাকা পৌঁছে ভোরে খালেক তেল পাম্পে নেমে তারা আমাকে দুটি লাগেজ দিতে পারেনি। পরে লাগেজ বুঝিয়ে না দিযে বরং আমাকে হেনস্থা করেছে এসবি সুপার ডিলাক্স পরিবহনের কর্মকর্তারা।’
এসবি পরিবহনের কুষ্টিয়ার কাউন্টার ম্যানাজার রেজাউল ইসলাম মালামাল হারানোর বিষয় অস্বীকার করে বলেন, ‘আমাদের কাছে তেমন কোনো অভিযোগ নেই।’
পরিবহন নৈরাজ্য নিয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট লুৎফুন নাহার বলেন, ‘অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কারী পরিবহনের তালিকাসহ সব ধরনের অভিযোগ আমাদের জানালে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’