কুষ্টিয়া আইনজীবি সমিতি থেকে সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম দুলাল বহিস্কার।
কুষ্টিয়া আইনজীবি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম দুলালকে জেলা আইনজীবি সমিতি থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। গঠনতন্ত্র পরিপন্থী ক্ষমতার অপব্যবহার ও সমিতির বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে তাকে আজীবন বহিস্কারের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
সোমবার সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শেখ মোঃ আবু সাঈদ স্বাক্ষরিত সাবেক সাধারণ সম্পাদকের বহিস্কারের চিঠি বিভিন্ন দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। এদিকে সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম দুলাল ক্ষমতায় থাকাকলীন জাল অডিট রিপোর্ট তৈরী করে সমিতির বিপুল পরিমান টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শেখ মোঃ আবু সাঈদ।
সমিতি সুত্রে জানা যায়, ২০১৮-১৯ মেয়াদে কুষ্টিয়া জেলা আইনজীবি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন নুরুল ইসলাম দুলাল। ক্ষমতায় থাকাকালীন “রহমান মুস্তাফিজ হক এন্ড কোং” নামে একটি চাটার্ড একাউন্টিং ফার্মের নামে জুনিয়র আইনজীবি আরিফুল ইসলাম রিপনের সহযোগিতায় আয়-ব্যয়ের একটি জাল ও ভূয়া রিপোর্ট তৈরী করেন। সেই জাল অডিট রিপোর্ট ৩১ জানুয়ারী ২০১৯ সালে সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভায় উপস্থাপন করে তার কপি সদস্যদের মাঝে বিতরণ করেন। উক্ত অডিট রিপোর্টে ব্যাপক গড়মিল থাকায় সাধারণ সদস্যদের মাঝে সন্দেহ সৃষ্টি হয়।
বর্তমান কার্যনির্বাহী পরিষদ “রহমান মুস্তাফিজ হক এন্ড কোং” সাথে যোগাযোগ করলে তারা কুষ্টিয়া জেলা আইনজীবি সমিতির ২০১৮-১৯ মেয়াদের কোন অডিট কার্য করেন নাই বলে লিখিতভাবে জানান। রহমান মুস্তাফিজ হক এন্ড কোম্পানী লিখিত জবাব পেয়ে পূনরায় অডিট করানোর সিদ্ধান্ত নেন বর্তমান কার্য নির্বাহী পরিষদ। চলতি বছরের ৪ এপ্রিল কার্য নির্বাহী কমিটির সভায় গত দশ বছরের সঠিক আয়-ব্যয় নিরূপনের জন্য “আক্তার আমির এন্ড কোং” নামের একটি চাটার্ড একাউন্ট্যান্টসকে অডিটের দায়িত্ব দেয়া হয়। উক্ত অডিট ফার্ম সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম দুলাল ২০১৮-১৯ মেয়াদে দায়িত্ব পালনকালে ২৮ লাখ ৪০ হাজার ২২৭ টাকা আত্মসাত করেছেন বলে রিপোর্ট প্রদান করেন। উক্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে সমিতির গত ২৩ অক্টোবর কার্য নির্বাহী পরিষদের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম দুলালের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা ও সমিতি থেকে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
কার্যনির্বাহী পরিষদের ওই সিদ্ধান্ত মতে গত ৩১ অক্টোবর কুষ্টিয়া মডেল থানায় জাল অডিট রিপোর্ট তৈরী করে সমিতির বিপুল পরিমান টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শেখ মোঃ আবু সাঈদ। একই অভিযোগে সমিতির সদস্য পদ থেকেও দুলালকে বহিস্কার করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার বহিস্কার আদেশ কার্যকর হওয়ার সাথে সাথে আইন পেশাসহ এতদ সম্পর্কিত যাবতীয় কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে নুরুল ইসলাম দুলালকে চিঠি দেয়া হয়েছে বলে জানান বর্তমান সাধারণ সম্পাদক। এছাড়াও আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে আত্মসাতের ২৮ লাখ ৪০ হাজার ২২৭ টাকা সমিতির তহবিলে জমা প্রদান করতেও বলা হয়েছে।
সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শেখ মোঃ আবু সাঈদ জানান, সমিতির বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাতের বিষয় ধামাচাপা দেয়ার জন্য ওই জাল ও ভুয়া অডিট রিপোর্ট তৈরী করেছিল সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম দুলাল ও তার সহযোগী আরিফুল ইসলাম রিপন। জাল ও ভুয়া সেই অডিট রিপোর্টটি সাধারণ সভায় পাশ হয়নি।