কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নের ৩৭ গ্রামের প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়াও দু’টি ইউনিয়নের চরাঞ্চলের সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
আকস্মিক বন্যায় চরাঞ্চলের প্রায় ১ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমির মাষকলাইসহ বিভিন্ন ফসল তলিয়ে গেছে। এসময় বন্যা হওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, এক সপ্তাহ ধরে পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পদ্মায় প্রতিদিন গড়ে ০.১২ সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে। বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) পদ্মার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির উচ্চতা ছিল ১৩.৮৬ সেন্টিমিটার। বিপদসীমা হল ১৪.২৫ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ বিপদসীমার ০.৩৯ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নের সোনাতলা, চরসোনাতলা, চল্লিশপাড়া, সৌদিপাড়া. ঠাকুরপাড়া, চরপাড়া, ইনসাফনগর, চিলমারী, চরচিলমারী, মানিকেরচর, বাংলাবাজার, চরবাহিরমাদী, বাহিরমাদী, ভবনন্দদিয়াড়, আতারপাড়াসহ ৩৭ গ্রামের সহস্রাধিক পরিবারের বসতবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে।
দু’টি ইউনিয়নের চরাঞ্চলের সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীসহ পানিবন্দি সাধারণ মানুষ পরিবার নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে। উপজেলার রামকৃষ্ণপুর, চিলমারী, ফিলিপনগর ও মরিচা এই ৪ ইউনিয়নে চাষ করা মাসকলাইসহ বিভিন্ন ফসল পানিতে তলিয়ে গিয়ে প্রায় ৯ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
ভাগজোত এলাকার কৃষক কাবিল হোসেন জানান, বন্যার পানিতে তার ৮ বিঘা জমির মাসকলাই ডুবে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ফিলিপনগর গ্রামের কৃষক মাহবুবুর রহমান জানান, পদ্মার পানি বেড়ে যাওয়ায় তাদের প্রায় ৪০ বিঘা জমির মাষকলাই পানিতে তলিয়ে গেছে।
রামকৃষ্ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ মণ্ডল জানান, তার ইউনিয়নের চরাঞ্চলের ২৪টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর অবস্থায় রয়েছে।
দৌলতপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সাইদুর রহমান জানান, দুর্যোগ মোকাবেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী প্রস্তুত রয়েছে। পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুষ্টিয়া-১ দৌলতপুর আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সারওয়ার জাহান বাদশা জানান, পদ্মা নদীতে হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৪ ইউনিয়নের মানুষ ক্ষতির মুখে পড়েছে। বিশেষ করে চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বহু মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন।
প্রতিনিয়ত তাদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। বন্যাকবলিত মানুষের পাশে থেকে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা হবে বলে জানান তিনি।
গত এক সপ্তাহে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধিতে প্লাবিত মানুষের সহায়তায় স্থানীয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা কোনো সহায়তায় এগিয়ে না আসলেও স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেছেন এলাকা।
দৌলতপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একেএম কামরুজ্জামান জানান, উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই অঞ্চলের প্রধান অর্থকরী ফসল মাসকলাইসহ শীতকালীন সবজির ক্ষেত। সব মিলিয়ে এই এলাকার কৃষকরা প্রায় ১০ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন বলে তিনি জানান।
দৌলতপুর উপজেলা চেয়ারম্যান এজাজ আহম্মেদ মামুন জানান, তারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ইতোমধ্যে পরিদর্শন করেছেন। কৃষকরা যাতে এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারে সে ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে ক্ষতিগ্রস্তদের কৃষি প্রণোদনা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ জানান, ভারতে বৃষ্টিসহ বন্যার কারণে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে, যার প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশ সীমানায় পদ্মাতীরবর্তী অঞ্চলে। ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যে পানি নেমে যাবে বলে তারা ধারণা করছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার কৃষকদের দাবি, সরকার পরবর্তী ফসল উৎপাদনে সহযোগিতা করলে তারা অনেকটা ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন। এ ব্যাপারে তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।