কুষ্টিয়ার মিরপুরে একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে এক তরুণ রোগীকে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে।
এই অভিযোগ পাওয়ার পর বুধবার পুলিশ ‘সমর্পণ’ নামে ওই নিরাময় কেন্দ্রে নির্যাতনে অভিযান চালিয়ে এটি সিলগালা করে দেয়। আটক করা হয় এর পরিচালকসহ তিন জনকে।
আটকরা হলেন- প্রতিষ্ঠানের মলিক আব্দুল মতিন এবং তার শ্যালক ও তত্ত্বাবধায়ক হাবিব উদ্দিন এবং মিন্টু। তাদের মিরপুর থানা পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মিরপুর থানার ওসি আবুল কালাম।
গত ১৯ নভেম্বর ওই প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা নিতে ভর্তি করা হয় মিরপুর উপজেলার কাদেরপুল গ্রামের এজাজুল আজীমের ছেলে ইমন আলীকে (২০)। পরদিন নির্যাতন চালিয়ে এবং বিষাক্ত ইনজেকশন প্রয়োগ করে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ উঠে।
ওই নিরাময় কেন্দ্রের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার একটি ফুটেজ ফেইসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলা প্রশাসন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়।
উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমি ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট রাকিবুল হাসান বলেন, অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানের মালিক ও দায়িত্বে থাকা তত্ত্বাবধায়ককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করা হয়েছে।
তিনি জানান, সমর্পণে চিকিৎসাধীন ৯ জন রোগীর মধ্যে ৬ জনকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর এবং বাকি তিনজনকে কুষ্টিয়ার ‘ফেরা’ নামক মাদক নিরাময় কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
মিরপুর থানার ওসি কালাম জানান, ইমনের মৃত্যুকে ঘিরে সৃষ্ট রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশ তদন্ত করছে।
জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আজিজুল হক বলেন, ‘সমর্পণ মাদকাসক্তি, মানসিক চিকিৎসা সহায়তা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে’ নানা অনিয়ম নজরে এসেছে। প্রাথমিকভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আমরা প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করেছি।
এদিকে সেখানে থাকা চিকিৎসা নিতে আসা কয়েকজন রোগীর সাথে কথা বললে তারা জানান, ওখানে প্রতিনিয়তই রোগীদের ওপর শারীরিক টর্চার করা হয়। যদি প্রতিবাদ করা হয় তাহলে হাত পা বেঁধে নির্যাতন করা হয়। কোন অফিসার ভিজিটে আসলে সবাইকে কি বলতে হবে সেগুলো শিখিয়ে দেয়া হয়। শিখানো কথার বাইরে কিছু বললেই শুরু করে শারীরিক নির্যাতন। কোন ঔষধ চাইলে ঔষধ দেয়া হয় না। যদি ভাত একটু বেশি চাই তবে একবারে ৫ প্লেট ভাত চাপিয়ে দিয়ে বলে সব খেয়ে উঠবি। যদি মরে যায় তবুও তোকে খেয়ে উঠতে হবে। এমনকি আমাদের দিয়ে বাথরুম পরিষ্কার রান্নাবান্না করানো থালা বাসন ধোয়া সহ সব কাজ করিয়ে নেয় সমর্পণ কর্তৃপক্ষ।