কুষ্টিয়ায় এক নারীর নর্মাল ডেলিভারি করতে গিয়ে বাচ্চা প্রসবের দ্বার ব্লেড দিয়ে কেটে দিয়েছে এই মহিলা ও তার জামাই। নবাগত বাচ্চাটি এখন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে রাজশাহী মেডিকেলে আর মা রয়েছে কুষ্টিয়ার এক প্রাইভেট ক্লিনিকে। এদের কি শাস্তি হওয়া উচিত?
এটা একটা কুষ্টিয়ার কসাইখানা ! নামটি তার বিরতি। এই কসাইখানায় মহিলাদের গর্ভপাত ও সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়। এভাবেই কোটিপতি বনে গেছে ভুয়া ডাক্তার সিরাজুল ইসলাম। তাকে সহযোগিতা করেন শাশুড়ি কুষ্টিয়া উদিবাড়ী এলাকার মৃত আবদুল হামিদের স্ত্রী রাশিদা।
গতকাল সকালে কুষ্টিয়া মিরপুর উপজেলার সাহেবনগর গ্রামের মোহাম্মদ মিঠুন এর স্ত্রী বর্ষার প্রসব যন্ত্রণা শুরু হলে দালাল মাধ্যমে কুষ্টিয়া আলফারমোড় মৃত মোশারফ হোসেন (পেগা ডাক্তার) এর ছেলে ভুয়া ডাক্তার সিরাজুল ইসলাম এর কাছে নিয়ে আসে। সকাল ৯ টা থেকে সিরাজুল ইসলাম ও তার শাশুড়ি রাশিদা মিলে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে রাত ১২টা পর্যন্ত বাচ্চা প্রসব করতে ব্যর্থ হয়। এক পর্যায়ে বর্ষার প্রচুর পরিমাণে ব্লিডিং শুরু হয়। পরিস্থিতি খারাপ দেখে তড়িঘড়ি করে বাড়ি থেকে বের করে দেয় ভূয়া ডাক্তার সিরাজুল ইসলাম। প্রথমে বর্ষাকে তার স্বামী নিয়ে যায় কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল। সেখানে ডাক্তার না পেয়ে চলে যান আদ্-দীন হাসপাতালে সেখানেও গিয়ে ডাক্তার পায় না। এর পর সাংবাদিকদের সহযোগিতায় বর্ষাকে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে গিয়ে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে বাচ্চা প্রসব করানো হয়।
ডাক্তারের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্ষার প্রসব দ্বারে কাটা যখন রয়েছে। বাজে ভাবে কাটা হয়েছে বাচ্চা প্রসবের দ্বার।
এদিকে বর্ষার মায়ের সাথে কথা বলে তিনি জানান, বর্ষার এক ননদ এর মাধ্যমে কুষ্টিয়া আলফার মোড় ডাঃ সিরাজুল ইসলাম কাছে নিয়ে যায়। বেলা ১২ টা থেকে আমার মেয়ে চিৎকার করতে থাকে। আমি বারবার মেয়ের কাছে ছুটে গেলে রাশিদা বেগম আমাকে ঘর থেকে বের করে দেয়। এভাবে একসময় গভীর রাতে আমার মেয়ের বাচ্চা প্রসবের দ্বার ব্লেড দিয়ে কেটে ফেলে। ঘর রক্তে ভরে যায়। এই অবস্থাতেই বারবার একতলা ও দোতালায় ওঠানামা করছিল। মেঝেতে কোন না পেরেই বাচ্চা প্রসবের দ্বার কাটে ডাক্তার সিরাজুল ইসলাম। মেয়ের আত্মচিৎকার সহ্য না করতে পেরে আমি আমার জামাইকে বলে বর্ষাকে নিয়ে চলে আসি। সরকারি হাসপাতাল ও আদ্-দ্বীন হাসপাতালে ডাক্তার না থাকায় সাংবাদিকদের সহযোগিতা একটি প্রাইভেট হাসপাতালের ডাক্তার নিয়ে সে সিজারিয়ান অপারেশন করানো হয়। মেয়েকে রক্ত দেয়া হয়েছে। আর নবজাতকের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় তাকে রাজশাহী মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।
বর্ষার স্বামী মিঠুনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে মিঠুন জানান, বাচ্চাকে নিয়ে রাজশাহী মেডিকেলে এসেছি। আমার বাচ্চার জন্য আপনারা দোয়া করবেন। আমি ভূয়া ডাক্তার সিরাজুল ইসলাম ও তার সহযোগী রাশিদার বিচার চাই।
এসব বিষয় নিয়ে ডাক্তার সিরাজুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। কিন্তু এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায় সাংবাদিক দেখে পালিয়ে গেছে ডাক্তার সিরাজুল ইসলাম।
তার বাড়িতে গিয়ে পাওয়া যায় শাশুড়ি রাশিদা বেগমকে, তিনি বলেন আমি ও সিরাজুল মিলে মেয়েটিকে নরমাল ডেলিভারি করার চেষ্টা করেছি। বাচ্চাটা বের হতে সমস্যা হচ্ছিল বলে সামান্য কাটা হয়েছে। আমি দীর্ঘদিন থেকে এ কাজ করে আসছি বলেও স্বীকার করেন তিনি।
অপরদিকে এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, সিরাজুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় ভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে আসছে। তিনি নিজেকে বড় ডাক্তার হিসেবে দাবি করেন। বিভিন্ন নারীর গোপনে গর্ভপাতও করান এই ডাক্তার। এভাবেই এই এলাকায় বিলাসবহুল দোতলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন সিরাজুল ইসলাম।
শাহারিয়া ইমন, কুষ্টিয়া