কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে তিন যুবককে আটকে রেখে রাতভর নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে ভয়ভীতি ও চাপ দিয়ে টাকা আদায়েরও অভিযোগ উঠেছে থানার ওসি আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে।
স্থানীয়দের দাবি, এর আগেও ওসি আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ উঠেছে। তার থানায় টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না। নিরীহ লোকজনকে আটকে রেখে তাদের পরিবারকে চাপ দিয়েও তিনি টাকা আদায় করেন। এমনকি মামলা দিয়ে আদালতে চালান দেওয়ারও নজির রয়েছে। এসব নিয়ে ওসির ওপর চরম ক্ষুব্ধ স্থানীয় এমপিসহ অন্য জনপ্রতিনিধিরা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি কুমারখালী পৌর শহরের মধ্যে সাঈদ বিশ্বাস নামে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে একটি দোকান কেনেন ওই এলাকার রাসেল কবির। তবে জসিম নামে আরেক ব্যবসায়ী রাসেলের কেনা দোকানটি নিজের বলে দাবি করে একে ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা আখ্যায়িত করে পৌরসভায় নালিশ দেন। পরে পৌরসভাকে ম্যানেজ করে তিনি দোকানটি ভেঙে দেন। এ নিয়ে উভয় পক্ষই আদালতে মামলা করেন। আদালত নিষেধাজ্ঞা দেন, কোনো পক্ষ সেখানে যাবে না। তবে আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ওসি খালেকের সহযোগিতায় জসিম আবার সেখানে কাজ শুরু করেন। খবর পেয়ে রাসেল তার ভাই ও মামাকে সঙ্গে নিয়ে বাধা দেন। এ অপরাধে পুলিশ বৃহস্পতিবার রাসেল, তার ভাই রাসেদুল ইসলাম রানা ও মামা রেজাউল হককে আটক করে থানায় নিয়ে গিয়ে আটকে রাখে। পরে ওসির নির্দেশে রাতভর তাদের ওপর নির্যাতন চালান এসআই বিপ্লবসহ কয়েকজন।
রাসেলের বাবা আব্দুল মজিদ অভিযোগ করে বলেন, ‘জসিমের কাছ থেকে ওসি খালেক মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে আমার দুই ছেলে ও শ্যালককে ধরে নিয়ে থানায় আটকে রেখে নির্যাতন করেছে। তাদের ওপর মিথ্যা মামলা দিয়ে আদালতে চালানেরও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমার দোকানের পুরোটাই ভেঙে দিয়েছে তারা। আমি ওসির বিরুদ্ধে প্রয়োজনে মামলা করব।’
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি বলেন, আদালত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। তার একটি সাইনবোর্ড লাগানো আছে। তারপরও ওসি ও পৌরসভাকে ম্যানেজ করে অন্যায়ভাবে জসিম দোকান ভেঙে দিয়েছে। এটা আদালত অবমাননার শামিল। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, কুমারখালী থানায় মামলা ও জিডি করতে হলে নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ দেওয়া লাগে। টাকা ছাড়া কোনো মামলা নেন না ওসি। আবার মামলা করে আসামি ধরাতে হলেও টাকা দেওয়া লাগে। আওয়ামী লীগেরই এক নেতা ওসির হয়ে থানায় দালালি করেন। তিনি সবকিছুর মধ্যস্থতা করেন।
এদিকে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত কুমারখালী কয়া গ্রামের বাসিন্দা উজ্জ্বল হুসাইন অভিযোগ করেন, গত বছরের শেষ দিকে কোনো কারণ ছাড়াই তাকে ধরে নিয়ে যায় কুমারখালী থানা পুলিশ। পরে তাকে আটকে রেখে ২০ হাজার টাকা নিয়ে ছাড়েন ওসি। এ ছাড়া কয়েক সপ্তাহ আগে উপজেলার পান্টি ইউনিয়নে তানভীর নামে এক যুবককে একইভাবে থানায় আটকে রাখা হয়। তাকে ছাড়তে ওসি খালেক ৪০ হাজার টাকা দাবি করেন তানভীরের পরিবারের কাছে। পরে ১৮ হাজার টাকা দিলে তানভীরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
জেলা পরিষদের এক কাউন্সিলর বলেন, ‘সবকিছুতেই ওসি খালেক টাকা নেন। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীকে তিনি মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছেন। এ ছাড়া মারামারি লাগলে তিনি দুই পক্ষের কাছ থেকেই টাকা নেন। আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতার দাপট দেখিয়ে তিনি চলাফেরা করেন। কুষ্টিয়াতে তার একাধিক ট্রাক ও দোকান আছে।
অভিযোগের বিষয়ে ওসি খালেক বলেন, বৃহস্পতিবার তিন যুবককে আটকের ঘটনায় ওই দোকানের ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। আর দোকান ভেঙেছে পৌরসভা। এ ছাড়া রাসেল, তার ভাই রানা এবং তাদের মামা রেজাউল হকের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। আর আমার থানায় মামলা ও জিডি করতে কোনো অর্থ লাগে না। বরং আমি যোগ দেওয়ার পর কুমারখালী থানা অপরাধমুক্ত হয়েছে। তাই একটা পক্ষ উদ্দেশ্যমূলকভাবে এসব রটাচ্ছে।