ধোকড়াকোল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক কানু কুমার আজ নিজের বাড়িতে গলায় ফাঁস নিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। এলাকার একজন ভালো শিক্ষক হিসেবে তাঁর সুনাম ছিলো সবর্ত্রই। প্রখর মেধাবী এই শিক্ষকের মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না এলাকার মানুষ ও তাঁর ছাত্র-ছাত্রীরা।
পারিবারিকভাবে কোনো ঝামেলা না থাকলেও আসলে কি কারণে তিনি আত্মহননের মতো একটি নিকৃষ্ট কাজ করতে পারলেন- এমন প্রশ্ন সবার। আসলে তিনি কি কারণে আত্মহত্যা করলেন?
জানা গেছে, উপজেলার জয়ন্তীহাজরা ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামের সমাজকর্মী নরেন বিশ্বাসের ছেলে কানু কুমার ওরফে কানু মাস্টার ২০১৩ সালে ধোকড়াকোল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক হিসাবে পাঠদান শুরু করেন।
বিদ্যালয়ে পাঠদান শুরু করার সাথে সাথে খুব অল্প কয়েক দিনের মধ্যে সবার প্রিয় শিক্ষক হয়ে উঠেন। তিনি ছিলেন সবার আদর্শ। তিনি ছাত্রদের খুব নিবিড়ভাবে পড়াশোনা করাতেন। যার ফলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে তার নাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। দূর-দুরান্ত থেকে তার কাছে শিক্ষা গ্রহণের জন্য আসতো। সবাইকে তিনি অত্যন্ত উৎসাহ সহকারে পাঠদান করাতেন।
তিনি ছিলেন একজন প্রতিবাদী ও সাহসী শিক্ষক। তিনি সমাজের উন্নয়নমূলক কাজের সাথে জড়িত ছিল। নারীদের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন সংগঠনের সাথে কাজ করেছেন।
বিদ্যালয় তিনি একজন শিক্ষক হিসাবে শুধু ছিলেন না। তিনি ছিলেন সব ছাত্র-ছাত্রীর কাছে একজন আদর্শিক ব্যক্তি। সব শিক্ষকের নয়নের মনি। পাঠদানের পাশাপাশি বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কাজে তিনি লিপ্ত ছিলেন। তিনি যে একজন খণ্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন, তা তিনি মনে করতেন না। বিদ্যালয় ও ছাত্র ছাত্রীদেরকে তিনি তার পরিবার মনে করতেন।
তিনি সব সময় স্বপ্ন দেখতেন তার ছাত্র ছাত্রীরা যেন মানুষের মতো মানুষ হয়ে তার নাম উজ্জল করুক। তার সবচেয়ে সম্মানের জায়গা ছিল এইটা।
তার জন্য তিনি গরীর ছাত্র ছাত্রীদের বিনামূল্য শিক্ষা দিতেন। সবসময় তিনি বলতেন বড় হয়ে যেন তোমরা দেশের জন্য কিছু করো। দেশকে পৃথিবীর দরবারে মাথা উঁচু করার তোমরাই হাতিয়ার। তিনি বলতেন আমার শিক্ষা তোমরা দেশের মঙ্গলের কাজে ব্যবহার করো।
যে মানুষটির ছিলো এতো গুণ, যার ভাণ্ডারে ছিলো এত জ্ঞান; আর সেই কিনা আত্মহত্যা করলো? এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেলো তাঁর আত্মহত্যার মূল কারণ। তিনি কয়েকদিন ধরেই মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। এলাকার কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ তার বিরুদ্ধে তারই এক শিক্ষকের মেয়ের সাথে অপবাদ রটায়। পরে অবশ্য সত্যটি বেরিয়ে আসে।
তার সরকারি চাকরি বয়স ছিলো আর কয়েকদিন। ইতোমধ্যেই তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ে চাকরির জন্য দিয়ে রেখেছিলেন মোটা অংকের টাকা। কিন্তু সেই চাকরিও অনিশ্চিত। স্কুলে ক্লাস নিয়ে আর টিউশনি করে পরিবারের ব্যয় সাংকুলান করতে পারছিলেন না। এসব বিষয়ের হতাশা তাকে ঘিরে ধরেছিল। যার জন্যই তার জীবনে নেমে এলো অন্ধকার। তার এই নির্মম পরিস্থিতির জন্য দ্বায়ী এই সমাজব্যাবস্থা।