সাগর, সবুজ, সাগর (২), রুবেল ও সুমন। এদের বয়স ২২ থেকে ২৫ এর মধ্যে হবে। সকলেই কুষ্টিয়া শহরের থানা মোড়ে অবস্থিত ‘সেলিম বেডিং’ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী। বৈশ্বিক মহামারী করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার ২৫মার্চ থেকে সারদেশে সকল সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষনা করে।
ফলে ঐ দিনের পর থেকেই সেলিম বেডিং বন্ধ রয়েছে। এই দোকানের ৫ কর্মচারী কর্মহীন হয়ে পড়ে। এসময় তারা বাড়িতে অবসর সময় কাটাচ্ছিল। দলনেতা সবুজের এক মামা কুমারখালীর শিলাইদহ ডেইরী ফার্মে কাজ করতো। তিনি বুদ্ধি দিলেন বর্তমান ডেইরী ফার্মগুলো বন্ধ থাকায় সেখানকার খামারীদের বাড়িতে প্রতি দিন প্রচুর দুধ অবিক্রিত থাকে ফলে এই দুধগুলো তারা ফেলে দিচ্ছে। এমন চিন্তা নিয়ে ৫ যুবক মাত্র ৮হাজার টাকা নিয়ে নেমে পড়ে ব্যবসায়। তাদের চিন্তা প্রতিদিন কুমারখালীর মহেন্দ্রপুর গ্রাম থেকে খামারীদের নিকট থেকে ২৫০লিটার দুধ এনে কুষ্টিয়া শহরের বিক্রি করবে আর এর থেকে যা মুনাফা হবে তা দিয়ে নিজেদের আয়ের পথ বেছে নেবে।
৪ এপ্রিল তারা প্রথম এই দুধের ব্যবসা শুরু করে তখন দুধের কেজি কেনা পড়তো ২৮টাকা আর বিক্রি করতো ৪০ টাকা। বর্তমানে কেনা পড়ে ৩৪টাকা আর বিক্রি করছে ৪৫টাকা। এই যুবকেরা শহরের থানা মোড়, কলেজ মোড়, ইসলামিয়া কলেজ গেট ও হোম ডেলিভারি দিয়ে এখন দুপুর পর্যন্ত বিন্দুমাত্র অবসর সময় পাচ্ছে না। তারা থানামোড়ে ঐ দোকানের সামনে দুধের সাথে শবরি কলা বিক্রি করছে তাতে আধা বেলায় তাদের ৫জনের দিনে আয় হচ্ছে ২৫০-৩০০টাকা। পরিশ্রমী এই যুবকেরা এই কাজে একটি অটো রিকসা ব্যবহার করছে তাতে প্রতিদিনের খরচ বাদেই তাদের এই আয়।
এই গ্র“পের দলনেতা সাগর জানান, করোনা ভাইরাসের এই সময়ে দোকান বন্ধ থাকায় ঘরে বসে আড্ডা দিয়েই সময় পার করছিলাম তবে মাথায় চিন্তা ছিল আয় না হলে পরিবারের খরচ কিভাবে মেটানো যাবে? এমন সময় এই আইডিয়াটা কাজে লাগিয়ে আমরা সকলেই ভোর থেকেই পরিশ্রম করে যাচ্ছি দুপুর পর্যন্ত তাতে যা আয় হচ্ছে তাতেই আমরা সন্তুষ্ট। সাগর জানায়-দোকান বন্ধ থাকায় আয় বন্ধ হয়ে যায় কেউ আমাদের খবর নেই না। এইদিকে বাড়িতে অর্থ ও খাবার সংকটের চিন্তায় সকলে মিলে ৮হাজার টাকার পুজি নিয়ে নেমে পড়ি এখন আমরা খুবই মজা পাচ্ছি তবে অনেক দিন দুধ বিক্রি না হলে সেদিন আয় কম হয়। তাতে আমরা ভেঙ্গে পড়েনি আমরা সাহসিকতার সাথে এই করোনা ভাইরাসের মধ্যে থেকেও কর্ম করে আয় করছি তাতে মানুষজন আমাদের কর্মের প্রতি শ্রদ্ধা সম্মান জানাতে সামান্যটুকু কার্পন্যতা করছে না ।
এদিকে অনেক স্থানে দেখা গেছে বেকার যুবকেরা আয় বর্ধন কাজে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছে। বিশেষ করে রিক্সা-ভ্যানে করে কেউ বিভিন্ন মাছ, কেউ সবজি, কেউ তরমুজ, কেউ কলা নিয়ে ফেরি করে বিক্রি করছেন। তাতে ঘরে বসে থাকা মানুষেরা যেমন উপকৃত হচ্ছেন তেমনিভাবে এরাও আর্থিকভাবে কিছুটা লাভবান হচ্ছে। কুষ্টিয়ার এই ৫যুবকের কাহিনী করোনা ভাইরাসের এই করুন সময়ে সকলের জন্য অনুকরনীয় হয়ে উঠেছে।