স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন ঘরমুখো মানুষ। প্রকৃতিতে চলছে গ্রীষ্মের দাবদাহ। এই গরমে ঈদযাত্রা একটু স্বস্তিদায়ক করতে যাত্রীদের অনেকেই সংগ্রহ করছেন এসি বাসের টিকিট। কিন্তু যাত্রীদের অভিযোগ, সুযোগ বুঝে এসি বাসের মালিকরাও ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন দ্বিগুণ। আর বাস মালিকদের দাবি, ঈদের সময় ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাওয়ার পর ফিরতি ট্রিপে বাসগুলোকে প্রায় খালি আসতে হয়। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতেই তারা দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছেন।
এসি বাসে সরকার নির্ধারিত কোনও ভাড়া না থাকায় মালিকেরা ইচ্ছামত ভাড়া নির্ধারণ করে রেখেছে। ঈদকে কেন্দ্র করে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বা এসি বাসের ভাড়া এখন লাগামছাড়া।
শনিবার (১ জুন) রাজধানীর কল্যাণপুর ও গাবতলী বাস টার্মিনাল ঘুরে এমন চিত্রই চোখে পড়েছে।
এসি বাসের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগে গতকাল শুক্রবার (৩১ মে) একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয়। অভিযানের সময় ওই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গাবতলী বাস টার্মিনালে জেআর পরিবহনে গিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের সত্যতা পান। এই কোম্পানির এসি বাসের ভাড়া আগে যেখানে ৭শ টাকা ছিল, ঈদ উপলক্ষে সে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ১৩শ টাকা। বিষয়টি নিয়ে একজন যাত্রী অভিযোগ করলে বিআরটিএ-এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জরিমানা করার প্রস্তুতি নেন।
এ সময় টার্মিনালে বিআরটিএর কন্ট্রোল রুমে বিআরটিএর চেয়ারম্যান মশিউর রহমান উপস্থিত ছিলেন। তাকে বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, ‘জরিমানা বা কোনও ব্যবস্থা নেয়া যাবে না। পরিবহনের জন্য আমাদের নির্ধারিত ভাড়ার রেট রয়েছে। কিন্তু এসি বাসের বিষয়ে আমাদের পক্ষ থেকে কোনও ভাড়া নির্ধারিত নেই। এই বাসের ভাড়া মালিকরাই নির্ধারণ করেন। এটা নিয়ে কেউ অভিযোগও করেননি। কেউ অভিযোগ করলে ভবিষ্যতে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো।’
ঢাকা থেকে কুষ্টিয়া রোডে চলাচলকারী এস বি আরএন এইট পরিবহনে এসি ভাড়া নেয়া হচ্ছে ১৩শ টাকা। অন্যান্য সময় যা ছিল ৮শ টাকা। ঢাকা থেকে ফরিদপুরে গোল্ডেন পরিবহনের এসি বাসের ভাড়া ৭শ টাকা। আগে যা ছিল ৪শ টাকা। ঢাকা থেকে যশোরে একে ট্রাভেলসের এসি গাড়িতে ভাড়া নেয়া হচ্ছে ১৮শ টাকা। যা আগে ছিল ১২শ টাকা।
ঢাকা থেকে কুষ্টিয়ায় উদ্দেশে যাওয়ার জন্য গাবতলী কাউন্টারে বসে ছিলেন নাবিল হক। তিনি বলেন, ‘এই গরমে একটু শান্তিতে যাওয়ার জন্য এসি গাড়িতে টিকিট কেটেছি। কিন্তু গরমের সঙ্গে সঙ্গে এসি গাড়ির টিকিটের দামও গরম করে দিয়েছে বাস মালিকগুলো। ৮শ টাকার টিকিট ১২শ টাকা দিয়ে কেটেছি।’
খুলনাগামী সেন্টমার্টিন পরিবহনের ৫ হাজার ২০০ টাকা খরচ করে এসি গাড়ির টিকিট কেটেছেন আয়েশা সিদ্দীকা। তিনি বলেন, ‘ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য এসি গাড়ি ছাড়া এই গরমে যাতায়াত করা খবই কষ্টকর। উপায় না দেখে বেশি দাম দিয়েই এসির টিকিট কেটে যাচ্ছি।’
এ বিষয়ে বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলেন, ‘পরিবহনের জন্য আমাদের নির্ধারিত ভাড়ার রেট রয়েছে। কিন্তু, এসি বাসের বিষয়ে আমাদের পক্ষ থেকে কোনও ভাড়া নির্ধারিত নেই। এই বাসের ভাড়া মালিকরাই নির্ধারণ করেন। এটা নিয়ে কেউ অভিযোগও করেনি।’
এ ব্যাপারে বাস ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘একটি এসি গাড়ি যাত্রী ভরে গেলেও ফেরার সময় খালি ফিরতে হয়। তাছাড়া একটা এসি গাড়িতে জ্বালানিও খরচ হয় দ্বিগুণ।’