কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার এক্তারপুর গ্রামের ঐতিহ্যবাহী রায় বাড়ির (বাবু বাড়ি) পুত্রবধূ নির্মলা রাণী রায় ‘রত্নগর্ভা মা’ সম্মাননা পেলেন । আজাদ প্রোডাক্টস্ প্রবর্তিত এই সম্মাননার জন্য চূড়ান্তভাবে মনোনীত হন নির্মলা রাণীরায়সহ দু’টি ক্যাটাগরিতে মোট ৩৫ জন মা।
আজ ১২ মে ‘বিশ্ব মা দিবস’- এ সকাল ১০টায় ঢাকা ক্লাবের স্যামসন এইচ. চৌধুরী সেন্টারে রত্নগর্ভা আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নির্মলা রাণীরায়সহ অন্য সকল মায়ের হাতে এই সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়।
নির্মলা রাণী রায়ের স্বামী প্রয়াত অর্দ্ধেন্দু শেখর রায় (কানু বাবু) ছিলেন রায় বাড়ির দ্বিতীয় প্রজন্মের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। বীর এই মুক্তিযোদ্ধা সমবায় অধিদফতরের উপ-নিবন্ধক হিসেবে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেন। পাশের গ্রামের ইশ্বরদী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি হিসেবে আজীবন উপজেলার শিক্ষা বিস্তারে অনন্য অবদান রেখে গেছেন সাতদশক আগে উচ্চশিক্ষা (বিএ) নেওয়া কানু বাবু।
তার স্ত্রী রত্নগর্ভা মা ‘নির্মলা রাণী রায়’ এর গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গার হাসামদিয়ার ঐতিহ্যবাহী ভদ্র বাড়িতে। তার বাবা প্রয়াত লোলিত মোহন ভদ্র ছিলেন ভাঙ্গার একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। ভাঙ্গার বুকে প্রথম ছাপাখানা স্থাপন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক কাজে তার বাবার অবদানের কথা আজও ভাঙ্গার প্রবীণ হিতৈষীরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে থাকেন।
১৯৪৮ সালের ১০ আগস্ট জন্ম নেওয়া নির্মলা রাণী রায় (৭১) মাত্র সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেওয়ার পর তার বিয়ে হয় স্বর্গীয় অর্দ্ধেন্দু শেখর রায়ের সঙ্গে। সরকারি চাকরিজীবী স্বামীর বার বার বদলির কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে সামলেছেন সংসার। স্বল্পশিক্ষিত হলেও তার ছয় ছেলেকেই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার পাশাপাশি স্বপ্রতিভায় বিকশিত ও স্ব স্ব ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে অসামান্য নিষ্ঠা ও ত্যাগ স্বীকার করেছেন। এই কারণেই তিনি অন্যদের সঙ্গে ‘রত্নাগর্ভা মা-২০১৮’ এ ভূষিত হন বলে আজাদ প্রোডাক্টস্ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
তার ছয় ছেলের মধ্যে বড় এ্যাডভোকেট অনিমেষ রায় ফরিদপুর জজকোর্টের এপিপি ও ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক। সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের সাবেক ভিপি ও সাবেক এই জিএস একাধারে সামাজিক-সাংস্কৃতিক-মানবতার সংগঠক, নাট্যাভিনেতা-বিতার্কিকসহ নানা গুণে গুণান্বিত। অপরেশ রায় অপু দক্ষিণাঞ্চল এলাকার শিশু শিক্ষায় অন্যতম সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সানরাইজ প্রি-ক্যাডেট স্কুল ফরিদপুরের অধ্যক্ষ ও পরিচালক হিসেবে বাবা-মায়ের আদর্শে শিক্ষা ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক কার্যক্রম বিস্তারে অবদান রেখে চলেছেন।
এ্যাডভোকেট অলোকেশ রায় ফরিদপুর জজকোর্টের এপিপি ও পল্লী প্রগতি সহায়ক সমিতি ফরিদপুরের আইন কর্মকর্তা এবং আইনজীবী ও রাজনৈতিক নেতা হিসেবে কাজ করছেন। ছোট তিন ছেলেই সাংবাদিক। তারা হচ্ছেন- দৈনিক সমকালের সিনিয়র রিপোর্টার অমরেশ রায়, দৈনিক টাকা টাইমস্-এর সহকারী সম্পাদক বিশিষ্ট শিশু সংগঠক, শিশুসাহিত্যিক-প্রকাশক অশোকেশ রায় এবং দৈনিক জনকণ্ঠের ফরিদপুর জেলার নিজস্ব সংবাদদাতা ও সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক অভিজিৎ রায়।