চাঞ্চল্যকর আকিফা হত্যার ঘটনায় গঠিত সরকারি একটি তদন্ত টিমের সদস্যরা সোমবার সকালে কুষ্টিয়ায় আসেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কুষ্টিয়ার চৌড়হাস মোড়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান ১০ সদ্যেসের ঐ তদন্ত টিম। তদন্ত টিমের সদস্যরা আকিফার বাড়িতে গিয়ে তার বাবা ও মা’র সাথে কথা বলেন। ঘটনাস্থলের প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথেও কথা বলেন তারা।
তদন্ত টিমে ছিলেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলাম, বিআরটিএ পরিচালক (অপারেশন) সিতাংশু শেখর বিশ্বাস, বুয়েটের সহযোগি অধ্যাপক ও দুর্ঘটনা গবেষনা প্রতিষ্ঠানের সদস্য কাজী মোহাম্মদ সাইফুন নেওয়াজ, নিরাপদ সড়ক চাই এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম আজাদ হোসেন, সাংবাদিক অশোক চৌধুরী। এছাড়াও স্থানীয় জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের প্রতিনিধিরা ছাড়াও বিআরটিএ বিভাগীয় পরিচালক ও কুষ্টিয়া নিরাপদ সড়ক চাই কমিটির সাধারণ সম্পাদক নূরুন্নবী বাবুসহ অন্যান্য সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তদন্ত কমিটির প্রধান সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক শফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
উল্লেখ্য, গত ২৮আগষ্ট বেলা সাড়ে ১১টায় কুষ্টিয়া শহরতলী চৌড়হাস মোড়ে বাসের ধাক্কায় মায়ের কোল থেকে পড়ে গিয়ে শিশু আকিফা মৃত্যুর ঘটনায় তিনজনকে আসামী করে মামলা হয়েছিল কুষ্টিয়া মডেল থানায়। ঘটনাস্থলে সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজের তথ্যের ভিত্তিতে চালকের অসাবধানতায় মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় শিশু অকিফার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে প্রমান পাওয়ায় বৃহষ্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায় নিহত শিশুর পিতা সব্জি ব্যবসায়ী সদর উপজেলার চৌড়হাস একালাকার বাসিন্দা হারুনর রশিদ বাদী হয়ে তিনজনের নামোলে¬খসহ মামলা দায়ের করেন। আসামীরা হলেন, ফরিপুর জেলার সদর উপজেলার বাসিন্দা- চালক খোকন মিয়া, সহকারী ইউনুস মাস্টার ও বাস মালিক হাজি জয়নাল আবেদীন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ নাসির উদ্দিন জানান, গত মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কস্থ শহরতলী চৌড়হাস মোড় এলাকায় রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা ফরিদপুরগামী যাত্রীবাহী বাস গঞ্জেরাজ পরিবহণ (ঢাকা মেট্টো-গ-১৪-০১৭৭) শিশু আকিফার মা রিনা খাতুনকে ধাক্কা দিলে কোল থেকে শিশুটি রাস্তায় পড়ে যায়। এতে গুরতর আহত শিশু আকিফা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়। এঘটনায় নিহত শিশুর পিতা বাদি হয়ে তিনজনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং ৪১/৩০/০৮/২০১৮। ধারা ২৭৯/৩৩৮(ক),৩০৪(খ) দন্ডবিধি।
বাদির দাবি বিষয়ে ওসি জানান, যেহেতু সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের ঘটনায় হত্যাকান্ডের অভিযোগ আমলে নিয়ে ৩০২ধারায় মামলা রুজুর বিষয়টি এখনও গেজেটভুক্ত হয়নি সেকারনে দন্ডবিধি ৩০২ ধারায় মামলা নেয়া হয়নি।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার দুপুরে কুষ্টিয়ার চৌড়হাসে অনেকটা ইচ্ছে করেই যাত্রীবাহি বাস দিয়ে পথচারী মা মেয়েকে ধাক্কা দেয় বাস চালক। এতে মা ও শিশু আফিফা গুরুতর আহত হয়। ঘটনাটি পাশের একটি সোনার দোকানের সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ে। ওই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটিতে দেখা যায় রাজশাহী থেকে ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা গঞ্জেরাজ (ঢাকা মেট্টো-গ-১৪-০১৭৭) নামের ওই বাসটি ঘটনাস্থলে দাড়িয়ে ছিল। এই সময়ে পথ চলতি একজন নারী তার শিশু কন্যাকে কোলে নিয়ে ওই বাসের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ কোন হর্ণ ছাড়াই চালক বাসটি চালিয়ে এসে মা রিনা বেগম কে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় আহত মা মেয়েকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে শিশুটির অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ও তার মাসহ সন্ধ্যায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকাতে স্থানান্তর করা হয়। ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন শিশু আকিফা বৃহস্পতিবার ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।